চাঁদা সংগ্রহ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা কদমতলায়, পুলিশের গুলিতে হত এক
বাড়ি-দোকানে ভাঙচুর-লুটপাট, বন্ধ ইন্টারনেট
বরাক তরঙ্গ, ৭ অক্টোবর : দুর্গাপূজার প্রাক্কালে ঘটে গেলো অসম-ত্রিপুরা সীমান্ত ঘেঁষা উত্তর ত্রিপুরা কদমতলায় পুজোর চাঁদা সংগ্রহ নিয়ে রবিবার এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা দোকানপাট ভাঙচুর সহ পুলিশের ছুড়া গুলিতে নিহত হল এক যুবক। এতে গোটা এলাকায় তমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে রয়েছে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী জওয়ানরা। দুর্গোৎসব উদযাপনে প্রশাসনের কাছে কঠোর নিরাপত্তা দাবি করেছেন বিভিন্ন পূজা কমিটির সহ উভয় সম্প্রদায়ের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বিশিষ্টজনেরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোমবার সকালে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী রোড মার্চ শুরু করেছে। পাশাপাশি, রবিবার থেকে পানিসাগর ও ধর্মনগর মহকুমাতে এবং আজ ঊনকোটি জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর বা উস্কানিমূলক পোস্ট না ছড়ানোর জন্য আহবান জানিয়েছেন উত্তর জেলা পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী।

প্রসঙ্গত, রবিবার দুপুরে কদমতলা ব্লক সংলগ্ন ইন্ডিয়ান ক্লাবের সদস্যারা চুড়াইবাড়ি-কদমতলা সড়কে পুজোর চাঁদা সংগ্রহ করছিলেন। সেই সময় একটি গাড়ি রোগী নিয়ে বহিঃরাজ্যের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। তারপর গাড়ি চালকের কাছে ৫০০০ টাকা দাবি করে পূজা কমিটির সদস্যরা। গাড়ির চালক মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করাতে ক্লাবের সদস্যরা মুসলিম সম্প্রদায়ের গাড়ির চালকে মারধর করে বলে অভিযোগ। তাছাড়া, গাড়িতে থাকা সদস্যদের মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার ও অভিযোগ উঠে। সেই গাড়ির চালকের পক্ষ হয়ে এলাকার কিছু পুরুষ মহিলা এসে ক্লাবে আশপাশ এলাকার বাড়ি ঘরে প্রবেশ করে পুরুষ মহিলা সহ শিশুদের পর্যন্ত মারধর করে। ফলে মুহূর্তের মধ্যে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক একই সময় ওই এলাকার দুই হিন্দু সাম্প্রদায়ের যুবক নিজের সামাজিক মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়কে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করে পোস্ট করেন। পরবর্তী সময়ে এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন কদমতলা থানাও ঘেরাও করেন। তাঁরা পুলিশের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাছাড়া, পরবর্তী সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক থানাও করেন। একসময়ে এই সম্প্রদায়েরই প্রতিনিধি দল থানায় বসে আলোচনা করেন। এক ঘন্টার মধ্যে ক্লাবের সদস্য নির্মলেন্দু সেন ও দীপজয় নাথকে পুলিশ গ্রেফতার করেন। এমতাবস্থায় ডেপুটেশনে আসা কিছু উশৃঙ্খল যুবক অভিযুক্ত বাপন সেনের বাড়ি সহ দুটি গাড়ি এবং কয়েকটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে ঢিল ছুড়ে এবং ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ।

এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছেন পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী সহ বিশাল আধা সামরিক বাহিনী ছুটে গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এক সময় মৃদু লাঠিচার্জ করা হয়েছে। কিন্তু বিবাদের মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশকে শূণ্যে ১৬০ রাউন্ড গুলি চালাতে হয়েছে। পুলিশের গুলিতে একজন নিহত ও আহত হয়েছেন। পাশাপাশি, ওই সংর্ঘষে টিএসআর সহ ১৬ জন পুলিশ আহত হয়েছে। রাতেই প্রশাসনের তরফ থেকে বিএনএস ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছে। তাছাড়া, গভীর রাতে আসাম রাইফেল ময়দানে নামানো হয়েছে।
সূত্র : দৈনিক জাগরণ।
