বিশ্ব তামাকবিরোধী দিবসে শিলচর মেডিক্যালে পালন
জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ৩১ মে : ধোঁয়ার ঘনঘটায় ঢাকা এক ভয়াবহ সত্যকে সামনে এনে বিশ্ব তামাকবিরোধী দিবসে এক শক্তিশালী বার্তা দিল শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল (এসএমসিএইচ)। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর অধীন ‘পপুলেশন বেসড ক্যান্সার রেজিস্ট্রি’ (পিবিসিআর), কাছাড়-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই সচেতনতা কর্মসূচিতে প্রকাশ পেল তামাক শিল্পের কৌশলী প্রতারণার মুখোশ।
এবছরের বিশ্ব তামাকবিরোধী দিবসের থিম ছিল— “Unmasking the Appeal; Exposing Industry Tactics on Tobacco Nicotine Products”। এই আন্তর্জাতিক বার্তাকে কেন্দ্র করেই এসএমসিএইচ-এর প্রাঙ্গণে জড়ো হয়েছিলেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, ক্যান্সার গবেষক, শিক্ষার্থীসহ এক বৃহৎ স্বাস্থ্য-মনস্ক সমাজ, যাঁরা সবাই তামাকের বিপরীতে এক জোট হয়ে শপথ নিয়েছেন জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় এক আবেগপ্রবণ দৃশ্য ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে। বাস্তব ক্যান্সার রোগীর কাহিনি ও চিকিৎসা পরিসংখ্যান ফুটিয়ে তোলে, কীভাবে তামাকের চকচকে মোড়কের আড়ালে লুকিয়ে আছে মৃত্যুর ফাঁদ—মুখগহ্বর ক্যান্সার থেকে শুরু করে ফুসফুসের ক্ষয়, এমনকি হৃদরোগের মতো প্রাণঘাতী পরিণতি পর্যন্ত। ধীরে ধীরে খুলে যেতে থাকে তামাক কোম্পানিগুলির ভেলকি—কীভাবে তারা বিজ্ঞাপনের মোড়কে বিষ বিক্রি করে চলেছে।

উপস্থিত ছিলেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রিন্সিপাল ও চিফ সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ ভাস্কর গুপ্ত, সহ-প্রিন্সিপাল, পিবিসিআর-কাছাড় প্রকল্পের মুখ্য ও সহ-গবেষক, এবং অন্যান্য প্রথিতযশা অধ্যাপক ও রেজিস্ট্রির কর্মীবৃন্দ। সকলেই নিজের বক্তব্যে একটাই সুরে বললেন—তামাকের মোহজালে যেন না পড়ে আজকের যুব সমাজ।
প্রধান অতিথি ডাঃ ভাস্কর গুপ্ত বলেন, “তামাক কোম্পানিগুলি যে মৃত্যুর ফাঁদ গুঁজে দেয়, তা লুকিয়ে রাখে বাহারি মোড়কের আড়ালে। অথচ আমাদের—চিকিৎসকদের—দায়িত্ব হল সেই মুখোশ খুলে, সমাজের সামনে সেই ভয়াবহতাকে তুলে ধরা।”
উপস্থিত বক্তারা সকলে তামাক ও নিকোটিন জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান।

একদিনের এই কর্মসূচি শুধুমাত্র সচেতনতা ছড়ানোর আয়োজন নয়, বরং এক দৃঢ় সংকল্পের আবহ তৈরি করে গেল সমাজে। এসএমসিএইচ-এর তরফে দেওয়া বার্তা ছিল সরল, অথচ জোরালো—আকর্ষণের মোহ নয়, সচেতনতার আলো বেছে নিন; ধোঁয়ার দুনিয়া নয়, বেছে নিন সুস্থ জীবনের পথ।
তামাক-বিরোধী এই রণকৌশলে শিলচরের চিকিৎসক মহল যে ভবিষ্যতের জন্য এক সুনিশ্চিত পথ দেখাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে এক মহৎ উদ্যোগ এবং সুস্থ ও নিরোগ সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।