সিইউইটি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে এআইডিএসও’র বিক্ষোভ শিলচরে

বরাক তরঙ্গ, ৪ এপ্রিল : সিইউইটি পরীক্ষা বাতিল করে প্রচলিত পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীদের কলেজে ভর্তির সুযোগ প্রদানের দাবিতে এআইডিএসও’র কাছাড় জেলা কমিটির পক্ষ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। শুক্রবার বেলা ২ টায় সংগঠনের উকিলপট্টিস্থিত জেলা কার্যালয় থেকে একটি দীপ্ত মিছিল সিইউইটি বাতিল কর, হায়ার সেকেন্ডারি পাস সব ছাত্রছাত্রীদের প্রচলিত পদ্ধতিতে কলেজগুলোতে ভর্তি কর ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে জেলা আয়ুক্ত কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে যায়। সেখানে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে একটি স্মারকপত্র আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে জেলা আয়ুক্ত মারফত  প্রদান করেন সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল। বিক্ষোভ চলাকালে সেখানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা সভাপতি স্বাগতা ভট্টাচার্য এবং জেলা সম্পাদক স্বপন চৌধুরী।

তারা বলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলোতে স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য ‘এনটিএ’ কর্তৃক আয়োজিত সর্বভারতীয় স্তরের ‘সিইউইটি’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। অথচ বহু দরিদ্র পরিবারের ছাত্র ছাত্রীরা এই পরীক্ষায় বসার আবেদন পর্যন্ত টাকার অভাবে করতে পারে নি। তিনি বলেন বরাক উপত্যকার তিন জেলায় অসংখ্য উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করেছে। অথচ সিইউইটি পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর তাদেরকে ইংরেজি, অসমীয়া বা বড়ো ভাষায় দিতে হবে। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যারা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তাদের পক্ষে সিইউইটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রায় অসম্ভব। গতবছর যারা সিইউইটি পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা দিতে আবেদন করেছিল তাদেরকে বরাক উপত্যকার বাইরে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। বাংলা বিষয় নিয়ে যাতে ভবিষ্যতে ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশোনা না করে সেই উদ্দেশ্যে তা করা হয়েছিল।

সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রদান করা স্মারকপত্রে এও বলা হয় যে পরীক্ষায় আবেদনকারীদের কাছ থেকে যে হারে ফি আদায় করা হচ্ছে তা আর্থিক দিক থেকে দুর্বল পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষে বহন করা ভীষণ কষ্টকর। তাছাড়া বরাক উপত্যকার মধ্যে যেহেতু কাছাড় জেলাতেই পরীক্ষার সেন্টার রয়েছে তাই যারা পরীক্ষায় বসার জন্য এখানে আসবে বা যাদের বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা দিতে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও পাশ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্যে যেতে হবে তাদের থাকা, খাওয়া বাবদ প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে। গত বছর গরীব পরিবারের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় বসতে পারে নি।

সিইউইটি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে এআইডিএসও'র বিক্ষোভ শিলচরে

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যতে কোচিং সেন্টারের উপর ভরসা করতে হবে। ফলে দরিদ্র পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষে তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। সাধারণ কলেজের সাধারণ পাঠ্যক্রমে ভর্তির নিয়ন্ত্রণ কোচিং মাফিয়াদের হাতে চলে যাবে। এই ব্যবস্থায় দেশের বিশাল সংখ্যক দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবে না এবং সরকারি কলেজগুলোতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হ্রাসের অজুহাতে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। আশ্চর্যের বিষয় যে এই পরীক্ষা আয়োজন এবং এর সেন্টার নির্ধারণের ক্ষেত্রে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা রাজ্য সরকারের কোনো ধরনের মতামত গ্রহণ করা হয় না। এই প্রক্রিয়ায় সংবিধান প্রদত্ত শিক্ষার যুগ্ম অধিকার ও দায়িত্ব রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীকারের উপরও হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০ শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রীয়করণ ও ব্যানিজ্যিকীকরণের যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে সিইউইটি পরীক্ষা আয়োজন। ভারতের মতো বৈচিত্র্যময় দেশে সিলেবাস, কারিকুলাম ইত্যাদি তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যে ভূমিকা ভারতের সংবিধানে রয়েছে তাকে নস্যাৎ করে দিয়ে গোটা দেশের শিক্ষা পদ্ধতিকে একই ছাতার নীচে নিয়ে আসা হচ্ছে যাতে একদিকে শিক্ষার বেসরকারিকরণ ও ব্যক্তিগতকরণ ঘটানো সহজ হয় এবং অন্যদিকে মধ্যযুগীয়  কুসংস্কারাচ্ছন্ন অবৈজ্ঞানিক ধ্যান, ধারণা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে দেশে বিভাজনের রাজনীতিকে আরও শক্তিশালী করা হয়।

সিইউইটি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে এআইডিএসও'র বিক্ষোভ শিলচরে

বরাক উপত্যকা সহ দক্ষিণ আসামের ছাত্র ছাত্রীরা যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, কার্যত উন্নত পরিকাঠামোহীন ও পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব থাকা অবস্থায়ও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে এধরনের সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলেজে ভর্তির সুযোগ প্রদান মুটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলা হয় যে আসাম হায়ার সেকেণ্ডারী কাউন্সিল বা তার সমতূল্য সরকার নিয়ন্ত্রিত বোর্ড থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছাত্রছাত্রীদের মার্কের ভিত্তিতেই আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় বিশাল সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীরা কলেজে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে দেশের শিক্ষামন্ত্রী, এনটিএ’ এর চেয়ারম্যান, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিকট সরাসরি স্মারকপত্র পাঠানো হয়েছে। বিক্ষোভ প্রদর্শন কালে সেখানে উপস্থিত ছিলেন পল্লব ভট্টাচার্য, আপন লাল দাস, সাবির আহমেদ, বাবলী দাস, তুতন দাস, শেফালি দাস, সবিতা দাস সহ অন্যান্যরা।

Author

Spread the News