বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল বাতিল সহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের
বরাক তরঙ্গ, ৭ এপ্রিল : বিদ্যুৎ খণ্ডের বেসরকারিকরণ রোধ, জোর করে স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপন বন্ধ করা, বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল-২০২২ বাতিলের দাবিতে অল ইন্ডিয়া ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বানে ১-৭ এপ্রিল সর্বভারতীয় প্রতিবাদ সপ্তাহ চলছে। এর অঙ্গ হিসেবে অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছাড় জেলা কো-অর্ডিনেশন কমিটির পক্ষ থেকে শিলচরের পানপট্টিস্থিত এপিডিসিএল কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।
সোমবার বিক্ষোভ চলাকালে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের অন্যতম সদস্য দীপঙ্কর চন্দ। তিনি বলেন, দেশের অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার মধ্যে অন্যতম বিদ্যুৎ খণ্ডের বেসরকারিকরণের প্রচেষ্টাকে দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। যদিও এই প্রতিস্থাপন গোটা দেশের সবক’টি রাজ্যে একইসঙ্গে একই নিয়মে করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার গেজেট নোটিফিকেশন জারি করেছিল। কিন্তু স্মার্ট মিটারের জটিলতা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রাহক সংগঠনের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকার প্রতিস্থাপনের কাজ হয় বন্ধ করে দিয়েছে নতুবা সরকারি কার্যালয়ে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই প্রতিস্থাপন করেছে। কিন্তু আসামের প্রতিটি প্রান্তের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের তীব্র প্রতিবাদকে অগ্রাহ্য করে রাজ্য সরকার সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ঘরে তা দ্রুত গতিতে প্রতিস্থাপন করছে। বেসরকারি নিম্নমানের কিছু স্মার্ট মিটার কোম্পানির সাথে চুক্তি করে এই প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে।

সংগঠনের অন্যতম সদস্য সুব্রতচন্দ্র নাথ বলেন, উদ্বেগের বিষয় হল বিদ্যুৎ আইন, ২০০৩ এ বৈদ্যুতিক মিটার গ্রাহকদের ঘরে প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে যে সব নিয়ম রয়েছে তাও এক্ষেত্রে সরাসরি উলঙ্ঘন করা হচ্ছে। গ্রাহকদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা না করেই প্রতিস্থাপন করার রাজ্য সরকারের অনুমতি প্রদান করেছে এ থেকে স্পষ্ট যে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ খণ্ডের বেসরকারিকরণই এর প্রধান লক্ষ্য। বেসরকারিকরণের প্রচেষ্টা বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি মাশুল লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে বিদ্যুৎ খণ্ডের কর্মরত হাজার হাজার স্থায়ী, অস্থায়ী শ্রমিক, কর্মচারীদের চাকুরী অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। যা সরাসরি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে।

বিক্ষোভে উপস্থিত মধুসূদন কর, মানস দাস, গৌরাঙ্গ নাথ, পরিতোষ ভট্টাচার্য, খাদেজা বেগম লস্কর প্রমূখ বলেন বিদ্যুৎ খণ্ডের বেসরকারিকরণের প্রচেষ্টাকে তরান্বিত করতে ইতিমধ্যে সংসদে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল, ২০২২ উত্থাপন করা হয়েছে। যদিও গোটা দেশের বিদ্যুৎ গ্রাহক ও বিদ্যুৎ খণ্ডের শ্রমিক, কর্মচারীদের প্রবল বাধার মুখে পড়ে তা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নিকট পর্যালোচনা করার জন্য পাঠাতে বাধ্য হয়। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কেন্দ্র সরকার এই বিলকে আইনে পরিণত করতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে।

তাঁরা বলেন, সম্প্রতি অসম সরকার বিদ্যুৎ মাশুল সংগ্রহের ক্ষেত্রে টিওডি এর নামে তিন ধরনের স্লাব’ তৈরির ঘোষণা করেছে। এতে পিক আওয়ার অর্থাৎ সন্ধ্যার সময় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিল পূর্বের প্রায় দ্বিগুণ হবে। বিক্ষোভ শেষে অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে একটি স্মারকপত্র বিদ্যুৎ খণ্ডের বেসরকারিকরণ রোধ করা, জোর করে স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপন বন্ধ করা, টিওডি প্রথা চালু করে গ্রাহকদের অবাধে লুণ্ঠন বন্ধ করা এবং বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল-২০২২ বাতিলের দাবিতে এজিএম মারফত বিদ্যুতমন্ত্রীর নিকট পাঠানো হয়।