শ্রীভূমি জেলাতেও ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসেসিয়েশনের বিক্ষোভ
মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ৭ এপ্রিল : তিন দফা দাবির ভিত্তিতে অল ইন্ডিয়া ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসেসিয়েশনের ডাকে ১ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিবাদ সপ্তাহ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর অঙ্গ হিসেবে সোমবার অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসেসিয়েশনের শ্রীভূমি জেলা কমিটিও এক বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে এজিএম মারফত অসমের বিদ্যুতমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এদিন প্রথমে এপিডিসিএল কার্যালয় প্রাঙ্গণে এসোসিয়েশনের কর্মীরা উপস্থিত হয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে। তাঁরা স্লোগান দেন, বিদ্যুৎ খণ্ডের বেসরকারিকরণের সমস্ত রকমের কৌশল অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে,জোর করে স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপন করা বন্ধ করো, টিওডি প্রথা মানছি না, মানবো না, বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল ২০২২ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। স্লোগান শেষে উপস্থিত জনতা এবং সাংবাদিক বন্ধুদের সামনে প্রথমে বক্তব্য রাখেন অ্যাসেসিয়েশনের জেলা সভাপতি সুনীতরঞ্জন দত্ত। তিনি বলেন, আমরা অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে দেশের অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিদ্যুৎ খণ্ডের বেসরকারিকরণের প্রচেষ্টা চলছে। বেসরকারিকরণের প্রচেষ্টাকে দ্রুত বাস্তবায়নের অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপন শুরু হয়। যদিও এই প্রতিস্থাপন গোটা দেশের সবক’টি রাজ্যে একইসাথে একই নিয়মে করতে কেন্দ্র সরকার গেজেট নোটিফিকেশন জারি করেছিল। কিন্তু স্মার্ট মিটারের জটিলতা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রাহক সংগঠনের আপত্তির ভিত্তিতে রাজ্য সরকার প্রতিস্থাপনের কাজ হয় বন্ধ করে দেয় নতুবা সরকারি কার্যালয়ে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সীমিত সংখ্যক প্রতিস্থাপন করে। অথচ পরিতাপের বিষয় যে আসামের প্রতিটি প্রান্তের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের তীব্র প্রতিবাদকে অগ্রাহ্য করে আপনার সরকার সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ঘরে তা দ্রুত গতিতে প্রতিস্থাপন করছে। বেসরকারি নিম্ন মানের কিছু স্মার্ট মিটার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে এই প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে।

উদ্বেগের বিষয় যে বিদ্যুৎ আইন, ২০০৩ এ বৈদ্যুতিক মিটার গ্রাহকদের ঘরে প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে যে সব নিয়ম রয়েছে তা এক্ষেত্রে সরাসরি উলঙ্ঘন করা হচ্ছে। গ্রাহকদের সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনা না করে এই প্রতিস্থাপন করার রাজ্য সরকারের অনুমতি প্রদান থেকে স্পষ্ট যে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ খণ্ডের বেসরকারিকরণই এর প্রধান লক্ষ্য।
বেসরকারিকরণের প্রচেষ্টা বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি মাশুল লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে বিদ্যুৎ খণ্ডের কর্মরত হাজার হাজার স্থায়ী, অস্থায়ী শ্রমিক, কর্মচারীদের চাকুরী অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। যা সরাসরি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে। বিদ্যুৎ খণ্ডের বেসরকারিকরণের প্রচেষ্টাকে তরান্বিত করতে ইতিমধ্যে সংসদে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল, ২০২২ উত্থাপন করা হয়েছে। যদিও গোটা দেশের বিদ্যুৎ গ্রাহক ও বিদ্যুৎ খণ্ডের শ্রমিক, কর্মচারীদের প্রবল বাধার মুখে পড়ে তা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নিকট পর্যালোচনা করার জন্য পাঠাতে বাধ্য হয়। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কেন্দ্র সরকার এই বিলকে আইনে পরিণত করা কঠিন হবে না।
অপর বক্তা অ্যাসেসিয়েশনের সম্পাদক সুজিৎ কুমার পাল বলেন যে, আমরা লক্ষ্য করছি সম্প্রতি আসাম সরকার বিদ্যুৎ মাশুল সংগ্রহের ক্ষেত্রে টিওডি এর নামে তিন ধরনের ‘স্লাব’ তৈরির ঘোষণা করেছে। এতে পিক আওয়ার অর্থাৎ সন্ধ্যার সময় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিল আগের প্রায় দ্বিগুণ হবে। আমরা অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসেসিয়েশন বিদ্যুৎ খণ্ডের বেসরকারিকরণ রোধ করা, জোর করে স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপন বন্ধ করা, টিওডি প্রথা চালু করে গ্রাহকদের অবাধে লুণ্ঠন বন্ধ করা এবং বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল-২০২২ বাতিলের জোরালো দাবি জানান।
এ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদান কার্যসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিমল চক্রবর্তী, সুভাষ নন্দী, বাসুদেব সেন, মনোজ দেব, অজয় চৌধুরী, বিষ্ণু দত্ত পুরকায়স্থ, পৃথ্বীজিৎ দেব, দেবব্রত শুক্ল ও গোপাল চন্দ্র পাল।