কমসোমলের তিনদিনব্যাপী শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক শিবিরে শহিদ দিবস পালন
বরাক তরঙ্গ, ২১ জুলাই : ১৯৮৬ সালের মাতৃভাষা আন্দোলনের অমর শহিদ জগন্ময় দেব ও দিব্যেন্দু দাসের আত্মবলিদানের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক দিন ২১শে জুলাই উপলক্ষে আজ এসইউসিআই কমিউনিস্ট দলের কিশোর কিশোরী বাহিনী “কমসোমল”এর একটি সুসজ্জিত মিছিল কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে হাইলাকান্দির হরকিশোর হাইস্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক শিবির থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান পথ পরিক্রমা করে শহিদ স্মারকে সকাল ৮টায় পৌঁছে গার্ড অফ ওনার প্রদর্শন করে। সেখানে শহীদ স্মারকে কমসোমল এর পক্ষ থেকে উপস্থিত কমসোমলের আসাম রাজ্য কমিটির আহ্বায়ক হাসেন আলী মাল্যদান করেন। তারপর মিছিল পুনরায় স্কুল প্রাঙ্গণে ফিরে আসে।
সেখানে ১৯৮৬ সালের মাতৃভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন ১৯৮৬ সালের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সেনানী, বরাক উপত্যকা সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির অন্যতম আহবায়ক এবং এআইডিএসও’র প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক অরুণাংশু ভট্টাচার্য। তিনি তার বক্তব্যে বলেন যে ১৯৭৯ সাল থেকে আসামে উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী শক্তি আসু, গণ সংগ্রাম পরিষদ ইত্যাদি রাজ্যের অন- অসমীয়া ভাষিক গোষ্ঠীর জনসাধারণের নাগরিকত্ব ও মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নিতে তথাকথিত বিদেশি খেদা আন্দোলন শুরু করে। উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী শক্তি আন্দোলনের নামে সাধারণ অসমীয়াভাষী মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে হাজার হাজার ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তি ধ্বংস করে। তথাকথিত বিদেশি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আসামে উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির প্রত্যক্ষ মদতে ১৯৮৫ সালে গঠিত হয় অসম গণ পরিষদ দলের সরকার। সেই সরকার ক্ষমতায় বসে কুখ্যাত ‘সেবা সার্কুলার’ জারি করে রাজ্যের ভাষিক সংখ্যালঘু ছাত্রদের উপর তৃতীয় ভাষা হিসেবে অসমীয়া ভাষা বাধ্যতামূলকভাবে চাপিয়ে দেয়। কিন্তু ১৯৬১ সালের ঐতিহাসিক মাতৃভাষা আন্দোলনের চেতনায় বলিয়ান বরাক উপত্যকার জনগণ বিশেষ করে ছাত্র যুবকরা সেবা সার্কুলার প্রত্যাহারের দাবিতে পুনরায় মরণপণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, তখন এআইডিএসও সহ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ‘সেবা সার্কুলার’ প্রত্যাহারের দাবিতে গড়ে তুলে বরাক উপত্যকা সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৮৬ সালের ২১ জুলাই করিমগঞ্জ শহরে তদানীন্তন আসামের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ গুলি বর্ষন করে হত্যা করে জগন্ময় দেব ও দিব্যেন্দু দাসকে। এই ঘটনার পর বরাক উপত্যকায় আন্দোলনের তীব্র জোয়ার সৃষ্টি হয়। আসাম সরকার বাধ্য হয় সেবা সার্কুলার স্থগিত করতে। তিনি বলেন একমাত্র সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠা আন্দোলনের পথে দাবি আদায় করা সম্ভব হয়। তিনি সবাইকে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে পাথেও করে ভবিষ্যতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে আহ্বান জানান।
কমসোমল আয়োজিত তিনদিন ব্যাপি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক শিবিরের তৃতীয় দিনের সন্ধ্যায় শিবিরের শেষ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন এস ইউ সি আই ( কমিউনিস্ট) দলের আসাম রাজ্য কমিটির অন্যতম সদস্য অজয় আচার্য কমসোমলের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে দ্বিতীয় দিন দুপুরের অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন দলের রাজ্য কমিটির অন্যতম সদস্য ভবতোষ চক্রবর্তী। এছাড়াও তিনদিনের এই শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক শিবিরে কিশোর কিশোরীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ব্যায়ামএবং শরীরচর্চা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও কিশোর কিশোরীরা পরিবেশন করে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি এবং মঞ্চস্থ করে দুটি নাটক নাটক। সেখানে ছাত্র ছাত্রীদের দেশাত্মবোধক মনন গড়ে তুলতে প্রদর্শন হয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী বিনয়, বাদল, দীনেশের উপর নির্মিত চলচ্চিত্র ইত্যাদি।