এই সেই বারান্দা

।। আলি চৌধুরী।।
২৪ এপ্রিল : এই সেই বারান্দা। যেখানে নেই জাতপাত, নেই কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ের বিভাজনের লড়াই। ঠাকুর বা আল্লাহের ওপর আস্থা ও অগাধ বিশ্বাস রেখে একই ছাঁদের তলায় মানবজাত। উচ্চ বর্ণের কেউ নিম্ন বর্ণের পায়ের পেছনে আবার কোথাও মুসলিমের হয় মাথার উপর বা পায়ের নিচে অন্য ধর্মাবলম্বীর লোক শুয়ে কোনও মতে রাত কাটাচ্ছেন। কে উচ্চ মধ্যবিত্ত, কে মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত এর কোনও বালাই নেই। এই বাস্তব চিত্র দেখলেও অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ সেখানে কোন রাজনৈতিক ফায়দা নেই। সবাই যেন দুঃখ বা বিপদের সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কখন কী ঘটবে সবসময় এক আতঙ্কে তাড়া করে তাঁদের মনে। আর এক অপ্রত্যাশিত সময়ের মুখে পড়তে হচ্ছে কারও না কারও। এই পরিস্থিতিতে নির্দ্বিধায় সমস্ত বিচারের উর্ধ্বে একে অপরের পাশে দাঁড়াতেও দেখা যায়। নেই কোনও রক্তের বাঁধন তারপরও কেউ যদি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান তখন একে অপরের গলায় জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। হিন্দু না মুসলিম ওই প্রশ্নের স্থান নেই কারও মনে।

শুধু তা নয়, তাঁদের কথাবার্তা, মিলামিশা দেখলে মনে হয় যুগ যুগ ধরে সম্পর্ক বা পরিচিত। কিন্তু সত্যিকারের এই পরিচয়ের বয়স হবে দুই বা তিনদিন। এই সময়েই একাগ্রতা, আস্থা, বিশ্বাসে ভরপুর হয়ে ওঠে সম্পর্ক। সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেও পিছপা হন না কেউই। মুহূর্তের সম্পর্ক এতই মধুর হয়ে যায় যে, কারও বাড়ি থেকে খাবার এলে মিলেমিশে খাওয়া হয়। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে সেটা সবচেয়ে বেশি। এই পরিবেশে যিনি পড়েন তিনিও সহজেই মিশে যেতে পারেন। তবে সপ্তাহ দশদিন পর কে কোথায় কারও জানা নেই। আবার সেই রাজনীতির পরিবেশে না চাইলেও অমোঘ নিয়মে ঢুকে যায় তাঁরা। আর সেই বারান্দা আর মনে থাকে না। সেই বারান্দা হল সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ-র বারান্দা।

Author

Spread the News