সম্মিলিত লোকমঞ্চের মাসিক লোককণ্ঠ অনুষ্ঠান শিলচরে অনুষ্ঠিত

বরাক তরঙ্গ, ২৯ জুলাই : শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয়ে রবিবার অনুষ্ঠিত হলো সম্মিলিত লোকমঞ্চ দ্বারা আয়োজিত ৩৩ তম মাসিক লোককণ্ঠ অনুষ্ঠান। এতে আমন্ত্রিত অতিথিদের পরিবেশনায় ছিল মনমাতানো সঙ্গীত ও নাচের অনুষ্ঠান। শুরুতে সম্মিলিত লোকমঞ্চের পরিবেশনায় সমবেত উদ্বোধনী সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থার সম্পাদক ভাস্কর দাস। লোককণ্ঠের উদ্দেশ্য ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বক্তব্য রাখেন সংস্থার সভাপতি ড. অনুপ কুমার রায় ও সহ-সভানেত্রী মঙ্গলা নাথ। 

এদিনের আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অর্পিতা দাস ও রিমি দাস। এছাড়াও নৃত্য পরিবেশন করেন ঈপ্সিতা নাথ ও হর্ষিতা নাথ। সম্মিলিত লোকমঞ্চের পক্ষ থেকে সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন মঙ্গলা নাথ, মনিমিতা গোস্বামী, জলি শুক্লবৈদ্য সহ অন্যান্যরা। এছাড়াও একক সংগীত পরিবেশন করেন কল্যাণী দাম ও স্মৃতি দাস। সবশেষে ধামাইল নৃত্য পরিবেশন করেন অষ্টসখীবৃন্দ ধামাইল গ্রুপের সদস্যরা। গোটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সপ্তমিতা নাথ। 

সম্মিলিত লোকমঞ্চের মাসিক লোককণ্ঠ অনুষ্ঠান শিলচরে অনুষ্ঠিত

রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংস্থার সম্পাদক ভাস্কর দাস সম্মিলিত লোকমঞ্চের উদ্যোগে কখন কিভাবে ও কাদের উদ্যোগে মাসিক লোককণ্ঠ অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সেসম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। লোককণ্ঠ অনুষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখতে সংস্থার বরিষ্ঠ সদস্য মনোরঞ্জন মালাকার সহ অন্যান্যদের অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন একসময় মনে হয়েছিল লোককণ্ঠ অনুষ্ঠানটি হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি বলে আজও অনুষ্ঠান করতে পারছি এবং তারজন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে বলে জানান। ভাস্কর দাস আরও বলেন গ্রামে অনেক প্রতিভাবান শিল্পীরা রয়েছেন তাদেরকে কিভাবে সম্মিলিত লোকমঞ্চের মাসিক লোককণ্ঠ অনুষ্ঠানে নিয়ে এসে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া যায় এই পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থার তরফে। আজকের দিনে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে আমাদের এখান থেকে উঠে আসা শিল্পীরা তাদের প্রতিভা মেলে ধরছেন যা আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয়। 

সম্মিলিত লোকমঞ্চের মাসিক লোককণ্ঠ অনুষ্ঠান শিলচরে অনুষ্ঠিত

এদিকে সম্মিলিত লোকমঞ্চের সভাপতি ড. অনুপ কুমার রায় বলেন, আমাদের সংস্থা বরাকের লোক সংস্কৃতির প্রচার, প্রসার ও সংরক্ষণ নিয়ে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মুষ্টিমেয় কিছু লোকসংস্কৃতিপ্রেমী ব্যক্তিদের নিয়ে আমাদের সংস্থা আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং আজকের দিনে তা বিস্তৃতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। অনুপবাবু বলেন সংস্থাকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং আমাদের উদ্দেশ্য সফল করতে হলে সবাইকে আরও বেশি করে ওয়াকিবহাল হতে হবে। গুটি গুটি পায়ে আজকের দিনে লোককণ্ঠ অনুষ্ঠান ৩৩ তম সংখ্যায় পা রেখেছে যা অত্যন্ত গর্বের ব্যাপার। শুধু তাই নয় সম্মিলিত লোকমঞ্চের এমন কিছু সভ্য আছেন যারা কেবল আমাদের সংস্থার সাথে জড়িত নন, গোটা বরাক উপত্যকার সংস্কৃতি জগতে এক বিশেষ স্থান নিয়ে আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন লোকশিল্পী মঙ্গলা নাথ, আমরা গর্বিত মঙ্গল নাথকে আমাদের পাশে পেয়ে মন্তব্য করেন ডঃ অনুপ কুমার রায়।

লোককণ্ঠের উদ্দেশ্য ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত লোকমঞ্চের সহ-সভানেত্রী মঙ্গলা নাথ। তিনি বলেন, মানুষের জন্মলগ্ন থেকে মৃত্যু অবধি লোকসংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে। তিনি এও বলেন, যেহেতু তিনি গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন সেই হেতু লোকসংস্কৃতিকে নিয়ে গ্রামের মানুষের আবেগ অনুভূতি ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছেন আর তখন থেকেই লোকসংস্কৃতির প্রতি তার আকর্ষণ বেড়ে যায়। পরবর্তীতে বরাক উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্তে লোকসংগীত পরিবেশন করে আসছেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আজকের দিনে তাকে এই জায়গায় পৌঁছাতে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন তাদের কাছে তিনি চিরকৃতজ্ঞ। লোকসংগীতের প্রতি তার আকৃষ্ট হওয়া এবং এই যাত্রা পথে যিনি সর্বপ্রথম তার পথপ্রদর্শক হিসাবে এগিয়ে এসেছিলেন তিনি ছিলেন প্রয়াত ননী গোপাল নাথ। প্রয়াত ননী গোপাল নাথের আন্তরিক সহযোগিতায় তিনি আকাশবানী শিলচরের শিল্পী হিসাবে সুযোগ পান। পরবর্তীতে প্রয়াত প্রসেনজিৎ ফাংচুর তত্বাবধানে রেডিও আর্টিস্ট হিসাবে নিয়মিত শিল্পী হিসাবে সংগীত পরিবেশন করেন। সেই সাথে মুকুন্দ দাস ভট্টাচার্য ও মনোরঞ্জন মালাকারের বিশেষ অবদানের কথাও উল্লেখ করেন লোকশিল্পী মঙ্গলা নাথ। 

উল্লেখ্য এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার সাংস্কৃতিক সম্পাদক কানাইলাল দাস, প্রচার সম্পাদক কমলেশ দাশ, বরিষ্ঠ সদস্য দীপক নাথ, কিশোর দত্ত চৌধুরী, অঙ্কিতা ভট্টাচাৰ্য, ঝিমলি নাথ, সুমনা দাস প্রমুখ। এদিন আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পীদের সংস্থার তরফে উত্তরীয় ও উপহার সামগ্রী দিয়ে সম্মানিত করেন শ্যামল কান্তি নাথ, মৌলি চক্রবর্তী, প্রমেশ দাস ও অমিতা নাথ। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানিয়েছেন সংস্থার প্রচার সম্পাদক কমলেশ দাশ। 

Author

Spread the News