ব্যাটে-বলে ম্যাক্স‌ওয়েলের ম্যাক্সিমাম

ইকবাল লস্কর (গুয়াহাটি থেকে)
২৯ নভেম্বর : আগে থেকে সঞ্চয় করে রাখলে পরবর্তীতে প্রয়োজনে সেটা কাজে লাগানো যায়। ঠিক যেন এমনটাই করেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর গুয়াহাটির বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে ঠিক যেন এমনটাই করেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে শেষ ওভারে বল করতে এসে ৩০ রান খরচ করে ফেলেন। যেন পরবর্তীতে কাজে লাগানোর জন্য ভারতের খাতায় জমা রেখেছিলেন। এবং দারুণভাবে কাজে লাগল সেই রান। ম্যাচের শেষ ওভারে প্রসিধ কৃষ্ণাকে ঠেঙিয়ে ২৩ রান তোলার পথে নিজের সেঞ্চুরি‌ও তুলে নিলেন সুপার ম্যাক্স। অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিলেন ৫ উইকেটের অনবদ্য জয়।
এদিন জিততে না পারলে কী হয়েছে, লিখে রাখুন, ভারতের এই দলটির আট থেকে নয়জন ক্রিকেটার আগামী জুন মাসে টোয়েন্টি ২০ বিশ্বকাপে সুযোগ পাবেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চলতি পাঁচ ম্যাচের টি২০ সিরিজে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলছে টিম ইন্ডিয়া। বর্ষাপাড়ায় সিরিজের তৃতীয় টি২০ ম্যাচে এক সময় মনে হয়েছিল এবার আর ২০০ রান করতে পারবে না ভারত। কিন্তু অকুতোভয় ব্যাটাররা শেষ পর্যন্ত দলকে ৩ উইকেটে ২২২-এ নিয়ে গেলেন।

ক্রিকেটে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে। সেটা হল ১১১ বা ২২২ বা এই ধরনের পরপর তিনটি সংখ্যা হল নেলসন। যা অপয়া বলে অনেকে মনে করেন। সেই অপয়া-র গেরোয় পড়ে আটকে গেল ভারত। ২২৩ রান করলে জিতবে, এমন অবস্থায় অস্ট্রেলিয়া করল ৫ উইকেটে ২২৫। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৪৮ বলে ১০৪ রানে অপরাজিত থাকলেন তিনি। ম্লান হয়ে গেল ভারতীয় দলের হয়ে রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের ৫৭ বলে ১২৩ রানের অপরাজিত ইনিংস।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার বর্ষাপাড়ায় যখন হাজির হলাম, বেশ ঠাণ্ডাই লাগছিল। সূর্যাস্তের সময় পারদ ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অন্য সময় হয়ে ছয়টার দিকে গ্যালারি ভরে যায়। কিন্তু গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত হেরে যাওয়ায় সেই উন্মাদনা কিছুটা ফিকে ছিল। তবে সেটা খানিকের জন্য। এক সময় বর্ষাপাড়ার দিকেও ছুট লাগায় পুরো গুয়াহাটি। আর, ম্যাচ যখন শেষ হচ্ছে সেই সময় গ্যালারিতে গর্জন। কানায় কানায় ভরা স্টেডিয়াম। এটাই টি২০ ক্রিকেটের মজা।

আরেকটা তথ্য যোগ করি, টি২০ আন্তর্জাতিকে ম্যাক্সওয়েল তাঁর শততম ম্যাচ খেললেন গুয়াহাটিতে। আর, এই ম্যাচে এমন এক কীর্তি গড়ে ফেললেন যা অনেকের জন্য শ্লাঘার বিষয়। হ্যাঁ, সেঞ্চুরি করে মাইলফলকের ম্যাচকে নিজের নামে করে রাখলেন।

ভারত হারলেও ম্যাক্সির সমর্থকরা কিন্তু উল্লাস উদযাপন করেছেন। কারণ, সামনেই রয়েছে আইপিএল। এর আগে তাদের ফেবারিট তারকার ফর্মে এখন বৃহস্পতি। রোহিত শর্মার চারটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি শতরানের রেকর্ডেও ভাগ বসালেন ম্যাক্সওয়েল। এই দুজন ছাড়া আর কেউই চারটি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ওপেনার নন বলে ম্যাক্সির রেকর্ড আরও উন্নত বলে মেনে নিতে হবে।

ভারতীয় ব্যাটিংয়ের কথা বললে, ৩ উইকেটে ২২২ রানের মধ্যে অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব করলেন ২৯ বলে ৩৯ রান। তবে সূর্য উঠতে না উঠতেই ডুবে গেল। অ্যারন হারডির বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান তিনি। কিন্তু ঋতু পরিবর্তন হয়ে তখন গায়কোয়াড়ের রাজত্ব। এই প্রথমবার শতরানের দেখা পেলেন রুতুরাজ
গায়কোয়াড়। তিলক বার্মাও ২৪ বলে ৩১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দিলেন। ভারতীয় দলের নতুন তারকা রিঙ্কু সিং বেশ কয়েকবার ব্যাট ঘোরালেন। তবে সেটা বাউন্ডারি লাইনের বাইরে। ওয়ার্ম-আপ। দর্শকরা মজাও পেলেন। কিন্তু উইকেট পড়ল না। বাইশ গজে যেতে পারলেন না নাইটরাইডার্স তারকা।

গুয়াহাটির দর্শকরা যে সব সময় ভাল খেলার ভক্ত সেটা এদিনের ম্যাচেই স্পষ্ট। দল হারলেও ভিড়ে ঠাঁসা স্টেডিয়ামেই হল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

Author

Spread the News