দিল্লিতে আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন
পিএনসি, ২৬ ফেব্রুয়ারি : রবিবার দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক কালীমন্দির সোসাইটি এবং আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি সমিতির যৌথ উদ্যোগে পালিত হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে মিনিস্টার (প্রেস) শাবান মাহমুদ। এছাড়া অন্যান্য অতিথ হিসেবে ছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভারতীয় ভাষা বিভাগের বাংলার অধ্যাপক ড.অগ্নিভ ঘোষ, কালীবাড়ির সচিব প্রদীপ মজুমদার, সভাপতি ড. শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
অনুষ্ঠান শুরু হয় প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং শহিদ বেদিতে পুষ্পনিবেদন করেন অতিথিরা। ছাত্রী উষ্ণী দাশগুপ্ত মূল অনুষ্ঠানের সূচনা করেন “মোদের গরব মোদের আশা” এই বিখ্যাত গানটি গেয়ে।
অনুষ্ঠানের মূল পর্বে প্রথমেই সমিতির প্রধান উপদেষ্টা ড. শ্রীমতী চক্রবর্তী অতিথি এবং উপস্থিত দর্শকদের স্বাগত জানান। পরে তিনি বাংলা ভাষার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বিভিন্ন কর্তব্য সম্বন্ধে স্মরণ করান। এরপর কালীবাড়ি সোসাইটির সচিব প্রদীপ মজুমদার বাংলা ভাষার বর্তমান সঙ্কট গুলির কথা তুলে ধরেন। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যাতে আরও বেশি করে এগিয়ে আসে তাদের মাতৃভাষা শিক্ষার জন্য সে ব্যাপারে সচেতন করেন। পরেই কালীমন্দির সোসাইটির সোসাইটির সভাপতি ড. শীর্ষেন্দু মুখার্জি বলেন, স্কুলে সুযোগ না পেলেও অভিভাবকরা যাতে বাড়িতে ছেলেমেয়েদের ভাষা শিক্ষার সুযোগ করে দেন। অনেক ক্লাব বা সমিতিতেও এই সুযোগ পাওয়া যায়। কালীবাড়িতেও নিয়মিত রূপে বাংলা শেখার ক্লাস হয়ে আসছে। এ ব্যাপারে যেকোনো রকম সাহায্য দিতে সোসাইটি প্রস্তুত তিনি সেকথাও জানান।
সমিতির কেন্দ্রীয় সচিব সুভাষ রায় বক্তব্য রাখেন। ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে একুশের মর্যাদা অসীম হলেও তিনি আরও দুটি মহান আন্দোলনের কথা বলেন। একটি মানভূম এবং অপরটি শিলচরের ভাষা আন্দোলন। পরে সমিতির বিস্তারিত কাজ ও লক্ষ্য সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এরপর প্রধান অতিথি বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে আগত মন্ত্রী (প্রেস) শাবান মাহমুদ তাঁর মূল্যবান বক্তব্যে জানান, ১৯৫২ ছাড়াও ১৯৬১ এবং ১৯৬৬ তেও বাংলাদেশে ভাষা নিয়ে নানা আন্দোলন হয়েছে। বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। এ ব্যাপারে ভারত সবসময়ই তাঁদের দেশের পাশে ছিল। তিনি মুজিবর রহমান এবং ইন্দিরা গান্ধীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে করিয়ে তিনি বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাও বলেন। হাসিনা কতটা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যেপ্রেমী সেকথাও উল্লেখ করেন। বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসার বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী সবরকমের সাহায্য করতে প্রস্তুত সেকথা জানান মাহমুদ।
জাকির হোসেন কলেজের ছাত্র রাজেশ মিশ্র মাত্র কয়েকটি লাইনে বক্তব্য রেখে সবার মন জয় করে নেয়।
সবশেষ বক্তা ছিলেন বিশেষ অতিথি ড.অগ্নিভ ঘোষ। প্রবাসে বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বাংলা ব্যাকরণের ইতিহাসের কথা টেনে আনেন তাঁর বক্তব্যে উপস্থিত ছাত্ররা উৎসাহিত বোধ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অবদানের জন্য মিনিস্টার প্রেস শাবান মাহমুদ এর হাত দিয়ে মৃণাল কান্তি রায়, অনিতা হালদার এবং নবনীতা চ্যাটার্জিকে স্মারক দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জাকির হুসেন কলেজের অধ্যাপিকা ড শর্মিষ্ঠা সেন প্রথমেই আবৃত্তি করেন কবি শামসুর রহমানের কবিতা “বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে” এবং কবি আর্যতীর্থের একটি কবিতা। কিশোরী রিমা রায় একটি লোক নৃত্য পরিবেশন করেন। এই পর্বের মূল আকর্ষণ ছিল মিহির বসু পরিচালিত ভাষা দিবসের উপর কয়েকটি সম্মিলিত গান এবং অরুণাভ ধর পরিচালিত “ক্রিয়েশন” গ্রুপের নাচ। গান এবং নাচের সুন্দর আবহে অনুষ্ঠান পরিপূর্ণতা পায়।
পরিশেষে একটি আনন্দের খবর এই যে, সমিতির মূল লক্ষ্য যা : নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ জাগিয়ে তোলা সেই লক্ষ্য কিছুটা পূর্ণ হতে চলেছে। বেশ কিছু কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। সকল দর্শক অতিথিদের ধন্যবাদ জানান মৃণালকান্তি রায়।