স্বামী হত্যাকারী স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
বরাক তরঙ্গ, ১৪ মার্চ : ভালোবেসে মাম্পি বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন ফারমিন উদ্দিন লস্কর। তবে তাদের এই সম্পর্ক বেরং হতে বেশিদিন লাগেনি। সম্পর্কে উষ্ণতা কমে যাওয়ার জের হিসেবে বিয়ের বছর দশেকের মাথায় একদিন রাতে বিবাদ বাধে দু’জনের মধ্যে। এতে মাম্পির হাতে খুন হয়ে যান ফারমিন। স্বামী ফারমিনকে হত্যার দায়ে কাছাড়ের দায়রা জজ বিপ্রজিত রায়ের আদালত বৃহস্পতিবার বছর ২৯শের মাম্পিকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শুনিয়েছে।
ফারমিনদের পরিবার মূলত হাইলাকান্দি জেলার লালা, রাজ্যেশ্বরপুর সপ্তম খণ্ডের বাসিন্দা। তবে বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই শিলচরে এসে তিনি মেহেরপুর কাবিউরা এলাকায় এক ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পত্নী মাম্পিকে নিয়ে ওই ভাড়াবাড়িতে থেকে অটো চালিয়ে জীবন নির্বাহ করতেন তিনি। ২০২৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে কাবিউরার ভাড়াবাড়িতেই ঘটে যায় খুনের ঘটনা। ততদিনে ফারমিন ও মাম্পির দুই পুত্র সন্তানের জন্ম হয়ে গিয়েছিল। ঘটনার সময় যাদের বয়স ছিল ৭ ও ৬। আর ফারমিনের বয়স ছিল ৩০।

ঘটনার রাতে সাড়ে ৯টা নাগাদ ফারমিন ও মাম্পির মধ্যে কোনও কারণে বিবাদ বাধে। এতে মাম্পি ঘরে থাকা একটি কাপড় কাটার কেঁচি দিয়ে স্বামী ফারমিনের গলায় কোপ বসিয়ে দেন। কেঁচির কোপে ফারমিন রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েন মেঝেয়।
ফারমিনের এক ভাই বাবুল হোসেন লস্করও কাবিউরার ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তিনি ফারমিনদের ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখেন দরজা বন্ধ। ডাকাডাকিতে সাড়া না পেয়ে বাবুল অন্যান্যদেরও ডেকে আনেন। সবাই মিলে দরজা খুলে দেখেন ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ফারমিন। তাকে উদ্ধার করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এসব ঘটনাক্রমের মাঝে মাম্পি বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা গিয়ে হাজির হন রাঙ্গিরখাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে। ফারমিনের বাবা জামাল উদ্দিন লস্কর ঘটনার খবর পেয়ে পরদিন ছুটে আসেন শিলচরে। তিনি পুত্রবধূ মাম্পিকে অভিযুক্ত করে পুলিশ ফাঁড়িতে দায়ের করেন এজাহার। এই এজাহারের ভিত্তিতে মামলা নথিভুক্ত করে তদন্ত প্রক্রিয়ার পর পুলিশ আদালতে পেশ করে চার্জশিট। এরপর আদালতে শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। বিচার প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার আদালত রায় ঘোষণা করে। এতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মাম্পি বেগমকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শোনানো হয়েছে। সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। জরিমানা অনাদায়ে তাকে ভোগ করতে হবে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ড।