সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এভিবিপির মহোৎসব পাথারকান্দিতে

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৯ এপ্রিল : শিল্প, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার আনন্দঘন সমাবেশ ঘটল পাথারকান্দিতে, যেখানে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এভিবিপি) পাথারকান্দি শাখা আয়োজন করল এক বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক মহোৎসব। দু’দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতা ছিল শুধুই একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের শিল্পীসত্তার এক উজ্জ্বল উন্মোচন। মঙ্গলবার পাথারকান্দির চান্দখিরা স্বামী বিবেকানন্দ কলেজ প্রেক্ষাগৃহে প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সূচনা করেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। উদ্বোধনী মূহূর্তেই অনুভূত হয় এক সাংস্কৃতিক জাগরণের বার্তা—যেখানে নতুনেরা ফিরে পায় অতীত ঐতিহ্যের আলো, আর ভবিষ্যতের শিল্পীসত্তা খুঁজে পায় দৃঢ় ভরসা।প্রথম দিনটিতে ছিল সংগীত ও চিত্রকলার এক অপূর্ব সম্মিলন। অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, লোকগীতি এবং আলপনা প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগীরা তাদের কণ্ঠস্বর, অনুভূতি ও কল্পনার ছোঁয়ায় শ্রোতা-দর্শকদের মুগ্ধ করে তোলেন। প্রতিটি পরিবেশনায় ছিল একেকটি গল্প—বাংলার মাটি, মানুষ ও মনের।দিন শেষে নির্ধারিত বিভাগের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়, যারা পরবর্তী পর্যায়ে এগিয়ে যাবেন জেলা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে।

বুধবার প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় ও শেষ দিনে মঞ্চ কেঁপে ওঠে নৃত্যের ছন্দে। পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রনৃত্য, নজরুলনৃত্য, লোকনৃত্য, ঝুমুর এবং ধামাইল। একেকটি নৃত্য যেন হয়ে ওঠে ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল, যার ভেতরে জড়িয়ে আছে বাংলার সংস্কৃতির শিকড়।সাংস্কৃতিক এই মহোৎসবে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের নিষ্ঠা, আত্মপ্রকাশের তীব্রতা এবং শিল্পীসত্তার ছাপ ছিল বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। বিচারকদের পক্ষ থেকেও উঠে আসে ভূয়সী প্রশংসা। প্রতিযোগিতা শেষে দ্বিতীয় দিনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। তাঁরা আগামী ১৩ এপ্রিল শ্রীভূমি জেলার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন। সেখান থেকে নির্বাচিত প্রতিযোগীরা আগামী ১৮ এপ্রিল বরাকভিত্তিক চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় শিলচরের মঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই চূড়ান্ত পর্বে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবেন বলিউডের প্রখ্যাত তারকা এবং বহু প্রতিভার অধিকারী, ‘মহাগুরু’ মিঠুন চক্রবর্তী, যিনি নিজ হাতে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেবেন পুরস্কার। তার উপস্থিতি প্রতিযোগীদের জন্য নিঃসন্দেহে হবে এক অনন্য অনুপ্রেরণা।

সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এভিবিপির মহোৎসব পাথারকান্দিতে

সমগ্র অনুষ্ঠানটি সফলভাবে পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন এভিবিপি-র শ্রীভূমি জেলা এসএফডিএ-র আহ্বায়ক সায়ন দেব। তাঁর সুনিপুণ পরিচালনা ও সংগঠকদের নিবেদিত প্রচেষ্টা ছাড়া এমন এক সুসংগঠিত আয়োজন সম্ভব হত না। এই আয়োজন শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি এক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রতীক। যেখানে তরুণ প্রজন্ম নিজেদের সাংস্কৃতিক শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, এবং সেই সঙ্গে নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরার একটি মূল্যবান মঞ্চও পাচ্ছে।

Author

Spread the News