বরাক উপত্যকার সার্বিক উন্নয়নই সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার: কৌশিক
আবর্ত ভবনে বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের কার্যালয় উদ্বোধন
জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১ জুলাই : বরাক উপত্যকার সার্বিক উন্নয়ন কেবল একটি দৃষ্টিভঙ্গি নয়, বরং এটি অসম সরকারের এক অটল অঙ্গীকার—মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সদা সচেষ্ট। এই মন্তব্য করেন খাদ্য, গণবণ্টন, উপভোক্তা বিষয়ক ও বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী কৌশিক রায়, মঙ্গলবার শিলচরের কাছাড় জেলা প্রশাসনের নতুন সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠকে তাঁর মূল বক্তব্য প্রদানকালে।
কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষস্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মন্ত্রী রায় বরাক উপত্যকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও সময়ানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ২০২৫–২৬ অর্থবছরে বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ মূলত মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন। এই আর্থিক সংস্থান যেন বাস্তব ফলাফলে পরিণত হয়, তার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

মন্ত্রী রায় বলেন, বরাক উপত্যকায় ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে একে একটি সক্রিয় বিকাশ করিডোর হিসেবে গড়ে তোলার, এবং এই লক্ষ্যপূরণে পরিকাঠামো নির্মাণ, কল্যাণমূলক উদ্যোগ এবং দীর্ঘমেয়াদী জীবিকাভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নমুখী প্রকল্পগুলির রূপায়ণের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় জোরদার করার কথা বলেন এবং সকল বিভাগগুলিকে একটি মিশনমোডে কাজ করার অনুরোধ জানান যাতে চলতি প্রকল্পগুলি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়। মন্ত্রী বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা দূর করে প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরবিচারে নজরদারি রাখার নির্দেশ দেন এবং প্রতিটি পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেন।
বৈঠকে তিনটি জেলার কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের অধীনে চলতি বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা, অর্থ ব্যবহারের স্বচ্ছতা, আন্তঃসংস্থার সমন্বয় এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে গভীর আলোচনা হয়। মন্ত্রী রায় বলেন, কোন প্রকল্প যেন প্রক্রিয়াগত কারণে বিলম্বিত না হয় এবং প্রতিটি জনকল্যাণমূলক কাজ যেন সহানুভূতি এবং দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়িত হয়।

বৈঠকে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা, শিক্ষা ক্ষেত্রের সম্প্রসারণ ও জীবিকা ভিত্তিক কর্মসূচির অগ্রাধিকারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা বরাকবাসীর জীবনমান উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। মন্ত্রী রায় পুনরায় জানান যে বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগকে শুধুমাত্র প্রশাসনিক ইউনিট না হয়ে এক সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করতে হবে।
বৈঠকে দুটি সাংস্কৃতিক পরিকল্পনাও আলোচনা হয়। এর মধ্যে একটি হল আগামী ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫-এ শিলচরে এক বিশাল ধামাইল নৃত্য উৎসবের আয়োজন, যেখানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনুমানিক ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ শিল্পী অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তারিখ চূড়ান্ত হবে পরবর্তী আলোচনার পর। দ্বিতীয় পরিকল্পনাটি হল গুৱাহাটীতে ৬, ৭ ও ৮ জানুয়ারি, ২০২৬-এ তিনদিনব্যাপী এক জাঁকজমকপূর্ণ বরাক উৎসব আয়োজনের, যেখানে বরাকের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ তুলে ধরা হবে। উভয় তারিখই চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এই বৈঠকে রাজ্যসভার সাংসদ কণাদ পুরকায়স্থ, বিধায়ক মিহিরকান্তি সোম, দীপায়ন চক্রবর্তী, নীহাররঞ্জন দাস, বিজয় মালাকার, কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, সিদ্দেক আহমেদ লস্কর, খলিল উদ্দিন মজুমদার এবং সুজাম উদ্দিন লস্কর উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের সচিব আদিল খান, আইএএস অতিরিক্ত সচিব রঞ্জিতকুমার লস্কর, এসিএস; করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির জেলা আয়ুক্ত এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক বিভাগের পদস্থ আধিকারিকরা।
বৈঠকের পর, বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের অস্থায়ী কার্যালয় শিলচরের ঐতিহাসিক পুরাতন সার্কিট হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন মন্ত্রী কৌশিক রায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ কনাদ পুরকায়স্থ, বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী, উধারবন্দ বিধায়ক মিহির কান্তি সোম, ধলাই বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস, দক্ষিণ শ্রীভূমি বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, রতাবাড়ি বিধায়ক বিজয় মালাকারসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কর্মকর্তারা।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী রায় বলেন, এই অস্থায়ী কার্যালয় আগামী ছয় মাসের জন্য বর্তমান স্থানে কার্যকর থাকবে এবং জানুয়ারি ২০২৬ থেকে শ্রীকোণা সচিবালয় ভবনে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হবে। তিনি বলেন, এই উদ্বোধন কেবল একটি বিভাগের কার্যালয় খোলা নয়, বরং এটি বরাক উপত্যকার মানুষের জীবনে উন্নয়নমুখী পরিবর্তন আনার এক সংকল্পবদ্ধ অভিযানের সূচনা।