বরাকের সরা শিল্পী দীনেশ পালের জীবনাবসান

বরাক তরঙ্গ, ২৫ নভেম্বর : বরাকের পরম্পরাগত শিল্পে বড়সড় আঘাত। চলে গেলেন এ অঞ্চলের সরা শিল্পের অন্যতম প্রতিনিধি তথা বিশিষ্ট মৃৎশিল্পী দীনেশ পাল। শুক্রবার পানিভরা বেকিরপারে নিজের বাড়িতেই বেলা বারোটা নাগাদ তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৮।

বর্তমানে বরাকের সেরা শিল্পের শেষ দুই প্রতিনিধি ছিলেন দীনেশ পাল এবং গান্ধী পাল ভ্রাতৃদ্বয়। বড় ভাই দীনেশ এবং গান্ধী ছোট। মূলত বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরের বাসিন্দা জিতেন পাল দেশভাগের পর বেকিরপারে বসতি করেন। তার হাত ধরেই বরাকে সরা শিল্পের সূচনা। বাবার পর এই পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে যান দুই ছেলে দীনেশ পাল ও গান্ধী পাল। বাবা জিতেন পালের হাত ধরে মৃৎশিল্পের হাতে খড়ি হলেও দীনেশ পাল বাংলাদেশের ডোমসারেও বহুদিন মৃৎশিল্পের বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর পানিভরা বেকিরপারে স্থায়ীভাবে কাজ করতে শুরু করেন। হাড়ি, কলস, তন্দুরি, পাতিল, টব, ফুলদানি সহ বিভিন্ন ধরনের মৃৎপাত্র তৈরিতে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। আবার লক্ষ্মী পূজার মরশুমে প্রচুর সচিত্র সরাও তৈরি করতেন তিনি। তেমন লাভজনক না হলেও সরা শিল্প থেকে তিনি কখনও মুখ ফেরাননি। এ কাজে সরকারি কোনও স্বীকৃতি মেলেনি ঠিকই তবে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কিছু বেসরকারি সংগঠন তাকে সম্মানিত করেছে। উন্নত মানের সরা অংকন শৈলীর জন্য একজন লোকশিল্পী হিসাবে সব মহলেই দীনেশ পালের একটা বিশেষ সম্মানের জায়গা ছিল। তবে বেশ কিছুদিন থেকে শরীর আর সায় দিচ্ছিল না। কিডনিজনিত এবং স্নায়ুজনিত সমস্যায় গত চার মাস থেকেই ছিলেন শয্যাশায়ী। ব্যাঙ্গালোর নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েও কাজ হয়নি। অবশেষে শুক্রবার দুপুরে সব চেষ্টা বিফল করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। শুধু গুণী শিল্পী নন নির্বিরোধ, একজন ভালো মানুষ হিসাবেও তার বিরাট সুনাম ছিল। তার মৃত্যুতে পরিচিত মহলে ব্যাপক শোকের ছায়া নামে।

মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে সহ অসংখ্য গুণমুগ্ধকে। স্ত্রী অঞ্জলি রানী পাল বেশ ক বছর আগেই প্রয়াত হয়েছিলেন। তবে দীনেশ পালের মৃত্যু বরাকের  মুমূর্ষ সরা শিল্পকে আরও সংকটের মুখে ঠেলে দিল বলে মনে করছেন অনেকেই।

Author

Spread the News