শিলচর ও ময়নাগড়ে মে দিবস মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের
বরাক তরঙ্গ, ১ মে : আজ মহান মে দিবদ। রক্তে রাঙা এই দিনটি সব মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রামের শপথ নেওয়ার দিন। অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের বরাক উপত্যকা জোনাল কমিটির আহ্বানে প্রতিটি ইউনিট কমিটি বরাকের বিভিন্ন প্রান্তে উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে রক্ত পতাকা উত্তোলন ও প্রতিবাদী সভা পালন করে। সব সভাতেই দাবি ওঠে, কেন্দ্রীয় সরকারের আইনে পরিণত করা শ্রমিক-বিরোধী শ্রমকোড বাতিল করতে হবে। শ্রমিকদের বিভিন্ন অধিকারের বৈধতা স্বীকার করে যে বহুবিধ শ্রম আইন রয়েছে তা বহাল রাখতে হবে ও সভ্যতার কারিগর শ্রমিকদের সকলধরনের অধিকারকে মান্যতা দিতে হবে। শ্রমিকরা যে সভ্যতা সৃষ্টি করে, পুঁজিপতি শ্রম-প্রকৃতির লুণ্ঠনে তা ধ্বংস করে। অসাম্য, দারিদ্র্য, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় পুঁজিপতিদের লুণ্ঠনের পরিণতি।
ডলু চা-বাগানের ময়নাগড়ে মে দিবসের পতাকা উত্তোলন করে একটি সভার আয়োজন করেন ইউনিয়নের ডলু চা-বাগান কমিটি। ডলুর সভায় বক্তব্য রাখেন কমলজিত তেলী, কুঞ্জলতা ঘাটোয়ার, নীলিমা ভূমিজ, মৃণাল কান্তি সোম, ধরিত্রী শর্মা, সীমা ঘোষ প্রমুখ। বক্তারা দাবি তোলেন, শ্রমিকের জীবন জীবিকা ও প্রকৃতিকে বিপন্ন করে প্রস্তাবিত এয়ারপোর্ট প্রকল্প বাতিল করতে হবে, অধিগৃহীত জমিতে পুনরায় ফসল ফলাতে হবে ও শ্রমিকদের কাজ দিতে হবে। বরাক-ব্রহ্মপুত্রে সমহারে মজুরি ও ন্যূনতম মজুরি প্রদান, ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের নিয়মিত কাজ ও বাগিচা শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে। এয়ারপোর্ট প্রকল্প বাতিল করে অধিগৃহীত জমিতে ফসল ফলানোর কাজ শুরু না করা পর্যন্ত শ্রমিকদের সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করার শপথ নেওয়া হয় এবারের মে দিবসে। কোরাস সাংস্কৃতিক সংস্থা সংগ্রামী গণসঙ্গীত পরিবেশন করে।
ডলুর মে দিবসের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথোরিটির আইন-বিশেষজ্ঞর এবং ইউনিয়নের সাথে মিলে তাঁরা এক আইনি সচেতনতা শিবির পরিচালনা করেন।
অনুরূপভাবে শিলচরে সকাল ৮-৩০ মিনিটে রাঙ্গিরখাড়ি শহিদ বেদির পাশে মে দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ইউনিয়নের শিলচরের সদস্যরা। প্রথমে পতাকা উত্তোলন করেন সুকল্পা দত্ত এবং সেখানে সভায় বক্তব্য রাখেন অরিন্দম দেব, স্নিগ্ধা নাথ, মৃণাল কান্তি সোম, অরূপ বৈশ্য ও সিদ্ধার্থ দত্ত। শহিদ বেদিতে মাল্যদান করেন মৃণাল কান্তি সোম এবং মে দিবসের প্রস্তাব পাঠ করেন আদিমা মজুমদার। প্রস্তাবে বলা হয়, গণতন্ত্র বিপন্ন কারণ শ্রমজীবীদের সব অধিকার হরণ করে নেওয়া হচ্ছে। যদি গ্রামীণ শ্রমিক, শিল্প শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, পরিবহণ শ্রমিক, স্কিম ওয়ার্কার মহিলা শ্রমিক ইত্যাদি একজোট হয়, তার সঙ্গে সামিল হয় গ্রামীণ কৃষকরা, তাহলে জনগণের জন্য প্রকৃত গণতন্ত্রের কায়েম শুধু সময়ের অপেক্ষা। গণ-জাগরণে গণ-সংগ্রামে জন-গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবাই মিলে নতুন সমাজ গড়ার আহ্বান জানানো হয় মে-দিবসের এই প্রস্তাবে।