মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা দিবস পালন এআইডিএসও জেলা কমিটি

বরাক তরঙ্গ, ২৮ ডিসেম্বর : বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে ৬৯ তম প্রতিষ্ঠা দিবস দেশের অন্যান্য স্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিলচরেও পালন করল ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও কাছাড় জেলা কমিটি। বুধবার ২৮ ডিসেম্বর উকিলপট্টিস্থিত জেলা কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের জেলা সভানেত্রী স্বাগতা ভট্টাচার্য। বেলা ১২ টায় মধ্যশহর সাংস্কৃতিক সংস্থার প্রেক্ষাগৃহ থেকে একটি মিছিল বের হয়ে সেন্ট্রাল রোড, প্রেমতলা, শিলংপট্টি হয়ে পুনরায় সভাস্থলে পৌঁছায়। প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে শিলচরের মধ্যশহর সাংস্কৃতিক সংস্থার প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশের সভাস্থলে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত প্রখ্যাত মার্ক্সবাদী দার্শনিক শিবদাস ঘোষের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন জেলা সম্পাদক গৌর চন্দ্র দাস, সহ-সভাপতি গৌরিশ দেব, কোষাধ্যক্ষ পল্লব ভট্টাচার্য, সাবির আহমেদ, আপন লাল দাস প্রমুখ সহ উপস্থিত সংগঠনের সদস্য সদস্যা ও ছাত্র ছাত্রীরা।

ছাত্র সমাবেশের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখেন গৌরচন্দ্র দাস। আলোচনা সভায় সংগঠনের রাজ্য সহ-সভাপতি হিল্লোল ভট্টাচার্য বলেন, ১৯৫৪ সালে ২৮ ডিসেম্বর ভারতের মাটিতে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত করার পরিপূরক ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে মহান মার্ক্সবাদী দার্শনিক শিবদাস ঘোষের চিন্তার ভিত্তিতে বিপ্লবী ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও গড়ে উঠেছিল। তিনি বলেন, আজ শিক্ষার উপর নেমে আসা প্রতিটি আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলছে একমাত্র এআইডিএসও। কেন্দ্র সরকার নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০ এর প্রণয়ন করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার যে নীল নক্সা রচনা করেছে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের কর্পোরেট প্রভুদের পরামর্শ মতেই তৈরি হয়েছে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতি শিক্ষার ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক চরিত্রকেই শুধু ধ্বংস করবে তাই নয়, এই শিক্ষানীতি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্পোরেটদের হাতে মুনাফা লুটার জন্য তুলে দেবে। ফলে আগামীতে দেশের সাধারণ দরিদ্র পরিবারের ছাত্ৰ-ছাত্রীদের শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশের সম্পূর্ণ দ্বার রুদ্ধ হয়ে যাবে। তিনি এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ছাত্র ছাত্রীদের তীব্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা দিবস পালন এআইডিএসও জেলা কমিটি
বক্তব্য রাখছেন হিল্লোল ভট্টাচার্য।

সমাবেশে বিধানসভায় ২১ ডিসেম্বর রাজ্যের শিক্ষামন্ত্ৰীর দেওয়া তথ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। শিক্ষামন্ত্ৰীর বক্তব্যে প্রকাশ পায় যে রাজ্যের ২৯৭৯ প্রাথমিক স্কুলে মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছেন, রাজ্যে দু’জন শিক্ষক থাকা স্কুলের সংখ্যা ১৫,১৬১ টি, ৪৭৯৯ টি প্রাথমিক স্কুলে পার্টিশন নেই অর্থাৎ একই কক্ষে বসে বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদান করাতে হয়, ১১২৪ স্কুলে পানীয় জল নেই, শৌচাগার নেই  ৩১১৭ টি স্কুলে, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলের শিক্ষকের শূন্যপদ রয়েছে ৪,৯৬২, মাধ্যমিক স্কুলে স্নাতকোত্তর শিক্ষকের শূণ্য পদের সংখ্যা ১৫০৫ টি, ১১০৭ টি স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। রাজ্য সরকারের নিকট পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষক নিয়োগের জোরালো দাবি সমাবেশ থেকে উত্থাপিত হয়। তাছাড়াও সমাবেশে রাজ্যের ৯৭ টি মডেল স্কুলে পি পি পি মডেল চালু করে ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে মাসিক ৩০০ টাকা ফিজ ধার্য করা, রাজ্যে হাজার হাজার শিক্ষকদের টিউটর বানিয়ে তাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং ক্লোজার ও মার্জার প্রক্রিয়ায় রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করা হয়।
এ দিন অসমের গুয়াহাটি, লক্ষীমপুর, ধুবড়ী, তেজপুর, মঙ্গলদৈ, যোড়হাট, হাইলাকান্দি, নগাঁও, গোয়ালপাড়া, শালমারা, নলবাড়ি সহ বিভিন্ন স্থানে অনুরূপ কার্যসূচি পালিত হয়।

Author

Spread the News