মাদক ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া নীরব আগ্রাসন : মৃদুল যাদব

ন্যারকো কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের বৈঠক শিলচরে____

বরাক তরঙ্গ, ২৮ মে : মাদক শুধু এক একটি নিষিদ্ধ দ্রব্য নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া এক নীরব আগ্রাসন। বুধবার শিলচরে কাছাড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ন্যারকো কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের বৈঠকে এ কথা বলেন জেলা কমিশনার মৃদুল যাদব। এ কথা বলে জেলা কমিশনার বলেন, প্রশাসনের পক্ষে এখন সময় এসেছে একযোগে, কঠোরভাবে এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। জেলা কমিশনার আরও বলেন, “এই লড়াইয়ে শুধু প্রশাসন নয়, সমাজের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকর্মী, সমাজকর্মী ও গণমাধ্যম সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই মাদকের বিরুদ্ধে বাস্তবিক সাফল্য আনা সম্ভব।” বৈঠকে ছিলেন জেলার পুলিশসুপার নুমল মাহাতো। তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক অভিযান চালিয়ে লক্ষাধিক টাকার নিষিদ্ধ মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কিছু চক্র আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সঙ্গেও যুক্ত, বলে অনুমান। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে সমন্বিত অভিযান পরিচালিত হবে এবং গ্রাম ও শহরাঞ্চলে স্থানীয় স্তরের টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে।

জেলা কমিশনারের সম্মেলনে কক্ষে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে হাজির ছিলেন জেলার আবগারি  বিভাগের আধিকারিক, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, গোয়েন্দা শাখা, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিভাগের পদস্থ আধিকারিকরা। বৈঠকে উঠে আসে সীমান্তবর্তী অঞ্চল, বিশেষত মিজোরাম ও মণিপুর লাগোয়া এলাকাগুলিকে কেন্দ্র করে মাদক প্রবেশের আশঙ্কা ও সেই সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজনীয়তা।

প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এনডিপিএস আইন অনুযায়ী কাছাড় জেলায় এখন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কার্যকর করা হয়েছে। অর্থাৎ মাদকের সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি কোনওরকম সহানুভূতির অবকাশ নেই। একইসঙ্গে সমাজের বিভিন্ন স্তরে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য স্কুল-কলেজ ও গ্রামাঞ্চলে প্রচারমূলক কর্মসূচি নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরকে মাদকাসক্তদের জন্য কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা জোরদার করতে বলা হয়েছে। সমাজকল্যাণ বিভাগকে বলা হয়েছে, বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে মাদকাসক্ত তরুণদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর কর্মসূচি শুরু করতে।

বৈঠকে জেলা প্রশাসনের তরফে প্রকাশ্যে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে “কাছাড় মাদকমুক্ত হবেই। প্রশাসন, পুলিশ ও সমাজের প্রত্যেকটি স্তরের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপই এর একমাত্র চাবিকাঠি।”

মাদক ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া নীরব আগ্রাসন : মৃদুল যাদব

অসমে মাদক পাচার এখন আর শুধু সীমান্ত এলাকার সমস্যা নয়, এটি এক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জও বটে। ঠিক সেই জায়গা থেকেই কাছাড় জেলা প্রশাসনের এই সক্রিয় ও সমন্বিত উদ্যোগ রাজ্যের অন্যান্য জেলার জন্য উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। শিলচরের এই বৈঠক থেকে যে স্পষ্ট বার্তা উঠে এল, এই যুদ্ধে আর কেউ একা নেই। সমাজ যখন জেগে ওঠে, প্রশাসন যখন দৃঢ় হয়, তখন অভিশাপকেও ঠেকানো যায়। কাছাড়ে সেই জাগরণ শুরু হয়েছে।

Author

Spread the News