জাতীয় প্রেস দিবস উপলক্ষে সত্য ও বিশ্বাসযোগ্যতার দৃঢ় বার্তা নিয়ে কর্মসূচি পালন কাছাড় জেলা প্রশাসনের

বরাক তরঙ্গ, ১৬ নভেম্বর : জাতীয় প্রেস দিবস উপলক্ষে কাছাড় জেলা প্রশাসন এবং বরাক উপত্যকার  তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয় শিলচরের যৌথ উদ্যোগে রবিবার এক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও মননশীল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদবের সভাপতিত্বে এই কর্মসূচি জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের নবনির্মিত সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, ছাত্রছাত্রী এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশকে উদ্দেশ্য করে জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব সাংবাদিক সমাজকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আধুনিক সাংবাদিকতার অন্যতম বড় লড়াই হল গতি ও শুদ্ধতার সংঘাত। তিনি উল্লেখ করেন যে ‘প্রথমে খবর প্রকাশ করার দৌড়ে’ ভুয়ো সংবাদের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। আয়ুক্ত যাদব আরও বলেন, বিভিন্ন অ্যালগরিদমিক পক্ষপাত আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবনার ওপর প্রভাব ফেলে, যে কারণে মানুষ প্রায়ই সাজানো কনটেন্টকেই বাস্তব বলে ধরে নেন। তিনি ভারতের প্রথম সংবাদমাধ্যম সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়ের আদর্শ স্মরণ করে বলেন যে ‘রামমোহন রায় পুরস্কার’ সেইসব সাংবাদিকদের প্রদান করা হয়, যারা সততা ও সাহসিকতার মূল্যবোধকে ধারণ করে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

মূল প্রবন্ধ পেশ করেন অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণজ্ঞাপন বিভাগের প্রধান ড. চার্বাক। তিনি বলেন, আজকের দিনে ‘প্রেস’ শব্দটি সমস্ত ধরনের মিডিয়া ও প্ল্যাটফর্মকে নির্দেশ করে। তিনি রাজা রামমোহন রায়ের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সংগ্রামের কথা স্মরণ করে তাঁকে ‘সত্যের প্রথম যোদ্ধা’ বলে উল্লেখ করেন। প্রফেসর চার্বাক বলেন, রায় সংবাদপত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ মেনে নেওয়ার চেয়ে নিজের পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া বেছে নিয়েছিলেন, বিশেষত সংবাদ নিবন্ধন সংক্রান্ত বিরোধের কারণে। “কিন্তু আজকের বাস্তবতা অনেক জটিল,” তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বর্তমান হুমকি ঔপনিবেশিক সেন্সরশিপ নয়, বরং ভুয়ো তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের দ্রুত বিস্তার।

ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ব্যুরো ও পিআইবি-র ক্ষেত্র প্রচার আধিকারিক পন্থোইবি সিংহ বলেন, অতিরিক্ত এবং অনিয়ন্ত্রিত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার মানুষের মতামতকে অস্থির করে তুলছে, কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তথ্য যাচাই না করেই মানুষ মত গড়ে তোলে। তিনি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে দায়িত্বশীল আচরণ শেখানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। সাংবাদিকদের প্রতি আবেদন জানান যে ভুয়ো বা সাজানো খবর প্রকাশ করলে তা সমালোচনা, বিদ্বেষ বা হিংসা উসকে দিতে পারে অতএব তা এড়ানো উচিত। নিরপেক্ষ এবং নির্ভুল প্রতিবেদনই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভারতীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার মূল ভিত্তি, তিনি উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে, প্রবীণ সাংবাদিক ও ‘সাময়িক প্রসঙ্গ’ পত্রিকার সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরী ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দীর্ঘ যাত্রাপথ এবং বেঙ্গল গেজেট থেকে শুরু করে ভাষা-ভিত্তিক সংবাদপত্রের দায়িত্বশীল ভূমিকার কথা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, কখনও কখনও সরকারি বিভাগের কাছ থেকে সঠিক তথ্য না পাওয়া সাংবাদিক মহলে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। তিনি পেশাগত দক্ষতা, গভীর অধ্যয়ন, আন্তরিকতা এবং মাঠপর্যায়ের প্রতিবেদনকে বিভ্রান্তিকর খবর রোধের মূল উপায় হিসেবে চিহ্নিত করেন। ডিজিটাল মিডিয়ার প্রসারকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, ভুয়ো তথ্য প্রতিরোধে ফ্যাক্ট-চেকিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করা অত্যাবশ্যক।

এদিন, অনুষ্ঠানের শুরুতে সহকারী আয়ুক্ত তথা ভারপ্রাপ্ত উপ সঞ্চালক তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয় শিলচর দীপা দাস স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন। তিনি জাতীয় প্রেস দিবসে সাংবাদিকদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল তথ্য পরিবেশে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার গুরুত্ব তুলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *