ইতিহাসকে অবহেলা করে কোনও দেশ উন্নতি করতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী মোদি
আশু চৌধুরী, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ৪ ফেব্রুয়ারি : ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ‘বিকশিত ভারত’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রবিবার অসমে প্রায় ১১,৬০০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। এ দিন গুয়াহাটির খানাপাড়ায় ভেটেরিনারি কলেজের মাঠে একটি অনুষ্ঠানে প্রকল্প গুলো উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। মাঠে জনসভায় ভাষণও দেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
প্রায় ১১,৬০০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন
ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গতকাল গুয়াহাটির জনগণ যেভাবে আমাকে স্বাগত জানিয়েছে তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমি টিভিতে দেখেছি যে আপনারা আমার জন্য এক লক্ষ মাটির প্রদীপ জ্বালিয়েছেন। আমি আপনাদের সকলের ভালবাসা এবং আশীর্বাদের জন্য কৃতজ্ঞ। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আজ মা কামাখ্যা প্রকল্প এবং অন্যান্য প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর।”
মোদি বলেন, এই প্রকল্পগুলি ক্রীড়া প্রতিভা বিকাশের পাশাপাশি রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বিকাশে সহায়তা করবে। এ ছাড়া প্রকল্পগুলি চিকিৎসা শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য একটি বড় আশীর্বাদ হবে।
প্রধানমন্ত্রী দাবি করে বলেন, গত ১০ বছরে, বিজেপির ডাবল-ইঞ্জিন সরকার দেশজুড়ে আইআইটিএস, এইমস-এর নেটওয়ার্ক প্রসারিত করেছে। “মেডিক্যাল কলেজগুলি সারা দেশে দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে। অসমে এর আগে মাত্র ছয়টি মেডিক্যাল কলেজ ছিল, বিজেপি ক্ষমতায় এসে গত ১০ বছরে সংখ্যাটি ১২-এ পৌঁছেছে। উত্তরপূর্বে অসমে ক্যান্সারের চিকিৎসার কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। দেশবাসীর জীবনকে সুন্দর করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা ৪ কোটিরও বেশি মানুষের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করেছি। ঘরে ঘরে জল, বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা এবং স্বচ্ছ ভারত মিশন অসমের মহিলাদের জীবনকে উন্নত করেছে।
সারাদেশে মন্দিরে ভক্তবৃন্দ বেড়েছে। কাশী করিডোর তৈরি হওয়ার পর, গত এক বছরে প্রায় ৮.৫ লাখ মানুষ কাশীতে ভ্রমণ করেছিলেন।মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনে সর্বশেষ শ্রী মহা কালেশ্বর মন্দিরে বছরে ৫ কোটির বেশি ভক্ত পরিদর্শন করেছেন। ১৯ লক্ষেরও বেশি মানুষ কেদারনাথ এবং উত্তরাখণ্ড ভ্রমণ করেছেন এবং ইতিমধ্যে ২৪ লক্ষ মানুষ। রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার মাত্র ১২ দিনের মধ্যে ২৪ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই অযোধ্যার রাম মন্দির পরিদর্শন করেছে।
দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে উত্তরপূর্বের সংযোগ আরও উন্নত করতে হবে। উত্তরপূর্বে পর্যটন খাতে বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে। কামাখ্যা করিডোর চালু হলে তা পর্যটন খাতে সহায়ক হবে। কামাখ্যা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রতি বছর আরও বেশি ভক্ত হবে। স্বাধীনতার পর যারা বছরের পর বছর ক্ষমতায় ছিল তাঁরাও পবিত্র উপাসনালয়ের গুরুত্ব বুঝতে পারেনি। রাজনৈতিক সুবিধার জন্য তাঁরা নিজেদের সংস্কৃতি ও ইতিহাস নিয়ে লজ্জিত করে। ইতিহাসকে অবহেলা করে কোনও দেশ উন্নতি করতে পারে না। কিন্তু, নতুন বছরে দেশের পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এবারের বাজেটে আমাদের সরকার পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। উত্তরপূর্ব পর্যটন ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে,” বললেন যোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
“আগে, রাস্তা এবং রেললাইনের দুর্বল সংযোগের কারণে উত্তর-পূর্বের একটি থেকে অন্য জেলায় ভ্রমণ করা বা জেলা থেকে জেলায় ভ্রমণ করা একটি কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু, ২০১৪ সালের পর, আমাদের সরকার রেলপথে বিনিয়োগ বাড়িয়ে ১৯০০ কিলোমিটার বাড়িয়েছে। ২০১৪ সালের আগের বাজেটের সঙ্গে তুলনা করলে রেলের বাজেট ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এভাবে গত দশ বছরের খতিয়ান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।