নববর্ষের শুভেচ্ছায় পরিবর্তন : গ্রিটিং কার্ডের স্থান নিয়েছে ডিজিটাল মাধ্যম
।। এসএম জাহির অব্বাস।।
(সাংবাদিক)
৩১ ডিসেম্বর : নতুন বছর মানেই নতুন আশা, নতুন পরিকল্পনা এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার নতুন উপলক্ষ। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো একটি পুরোনো এবং বিশ্বব্যাপী প্রচলিত রীতি। কয়েক দশক আগে, প্রিয়জনের কাছে নতুন বছরের শুভেচ্ছা পাঠানোর জন্য ব্যবহার করা হতো রঙিন এবং চমৎকার ডিজাইনের গ্রিটিংস কার্ড। এই কার্ডগুলো শুধু শুভেচ্ছাবার্তা বহন করতো না, এগুলোতে থাকতো প্রেরকের আন্তরিক অনুভূতির ছোঁয়া।
তবে, প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি ধীরে ধীরে স্থান দিয়েছে আধুনিক ডিজিটাল মাধ্যমকে।
বর্তমান যুগে গ্রিটিং কার্ডের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এর জায়গা দখল করেছে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইমেইল এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। দ্রুত এবং সহজে মেসেজ পাঠানোর সুযোগ থাকায় এখন অধিকাংশ মানুষ মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমেই শুভেচ্ছা জানিয়ে দেন।
প্রযুক্তির এই যুগে ডিজিটাল মাধ্যম শুধু সময় সাশ্রয়ই করেনি, এটি বিভিন্ন রকম সৃজনশীলতার সুযোগও এনে দিয়েছে। অ্যানিমেটেড কার্ড, ভিডিও শুভেচ্ছা, GIF এবং কাস্টমাইজড ডিজিটাল মেসেজ অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে, কাগজ ও ডাক ব্যবস্থার ঝামেলা এড়ানো এবং পরিবেশ বান্ধব হওয়ার কারণেও ডিজিটাল মাধ্যমের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
তবুও, গ্রিটিং কার্ডের আবেদন পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। এখনও কিছু মানুষ আছেন, যারা প্রিয়জনদের বিশেষ অনুভূতি জানানোর জন্য হাতে লেখা কার্ড ব্যবহার করেন। এই চর্চাটি আজও আন্তরিক এবং ব্যক্তিগত স্পর্শের জন্য প্রসিদ্ধ। বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে গ্রিটিং কার্ডের ব্যবহার এখনও কোনো কোনো জায়গায় দেখা যায়।
ডিজিটাল মাধ্যমের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার ফলে গ্রিটিং কার্ড এখন একটি নস্টালজিক স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, বিশেষ দিন এবং অনুষ্ঠানে এর ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ হবে না বলেই ধারণা করা হয়। গ্রিটিং কার্ড এখনও একটি মূল্যবান উপহার হিসেবে বিবেচিত হয়, যা অনুভূতির গভীরতাকে ফুটিয়ে তোলে।
গ্রিটিং কার্ডের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। প্রাচীন মিশর এবং চীনের সভ্যতার মধ্য দিয়ে এটি প্রসারিত হয়েছিল। আধুনিক সময়ে, ১৯ শতকে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। নববর্ষে গ্রিটিং কার্ড ব্যবহার ছিল আনন্দ এবং শুভেচ্ছার এক অনন্য উপায়।
একসময় ডাকযোগে গ্রিটিং কার্ড পাঠানোর রীতি ছিল অত্যন্ত প্রচলিত। হাতে লেখা শুভেচ্ছা বার্তা, রঙিন নকশা এবং কার্ডের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা প্রিয়জনের কাছে পৌঁছে দিতো বিশেষ এক অনুভূতি। নববর্ষের কার্ডগুলো ছিল ব্যক্তিগত এবং আন্তরিক। বিশেষ করে শিশুদের জন্য কার্ড পাঠানোর রীতি ছিল আনন্দের এক উৎসব।
বর্তমান যুগে, গ্রিটিং কার্ডের সেই জনপ্রিয়তা অনেকটাই হারিয়ে গেছে। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ইমেইলের মতো ডিজিটাল মাধ্যম দ্রুত এবং সাশ্রয়ী উপায়ে শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ এনে দিয়েছে। একটি বার্তা লিখে বা GIF তৈরি করে মুহূর্তের মধ্যে হাজার হাজার মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া যায়।
গ্রিটিং কার্ডের কিছু বৈশিষ্ট্য এখনও অনেককে আকর্ষণ করে:
ব্যক্তিগত স্পর্শ: কার্ডে প্রেরকের হাতের লেখা বার্তা প্রিয়জনের কাছে বিশেষ এক অনুভূতি জাগায়।
সংগ্রহের মূল্য: অনেকেই শুভেচ্ছা কার্ড সংগ্রহ করেন, যা তাদের জীবনের বিশেষ মুহূর্তগুলোর স্মৃতি ধরে রাখে।
উপহারের অনুভূতি: কার্ড পাঠানোর মাধ্যমে প্রিয়জনের জন্য ভালোবাসা এবং যত্ন দেখানো যায়।
একসময় গ্রিটিং কার্ড ছিল একটি বিশাল বাণিজ্যিক ক্ষেত্র। ক্রিসমাস এবং নববর্ষের সময় কোটি কোটি কার্ড বিক্রি হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই ব্যবসার পরিসর অনেকটাই সঙ্কুচিত হয়েছে। এর পরিবর্তে ডিজিটাল ই-কার্ড এবং পেইড সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক শুভেচ্ছা প্ল্যাটফর্ম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোর পদ্ধতি যাই হোক না কেন, দিনের শেষে আমাদের মূল লক্ষ্য থাকে প্রিয়জনদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা। এটি ডিজিটাল বার্তা হোক বা হাতে লেখা একটি কার্ড—প্রত্যেকের নিজস্ব পছন্দ এবং ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম আলাদা।