নবজাতক বিক্রি! শিলচরে গ্রেফতার দালাল, পলাতক শিশুর বাবা-সৎমা

বরাক তরঙ্গ, ১৪ নভেম্বর : মায়ের সঙ্গে প্রতারণা করে শিশুসন্তানকে হস্তান্তর করা হয়েছিল অন্য এক দম্পতির কাছে। এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ শিশুসন্তানকে উদ্ধার করার পাশাপাশি গ্রেফতার করেছে একজনকে। তবে পলাতক ওই শিশুর বাবা এবং সৎমা। সন্দেহ করা হচ্ছে, ঘটনার পেছনে রয়েছে শিশুসন্তান বিক্রির এক চক্র।

গ্রেফতার করা হয়েছে শিলচর মধুরবন্দ খিলোগ্রাম এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন নামের এক যুবককে। পুলিশ সূত্রের খবর, আমির বিভিন্ন ক্ষেত্রে দালালির সঙ্গে জড়িত। এই শিশুসন্তানকে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করেছিল সে। তাই সন্দেহ করা হচ্ছে সে জড়িত রয়েছে শিশু বিক্রির চক্রের সঙ্গে। সমিরুন নেসা নামের যে মহিলার শিশুসন্তানকে প্রতারণা করে অন্য দম্পতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল, তিনি মূলত শ্রীভূমি জেলার রাতাবাড়ি থানা এলাকার বিহাইরডালার বাসিন্দা। তার স্বামীর নাম গুলজার হোসেন তালুকদার। গুলজার রাতাবাড়ি বিহাইরডালার বাসিন্দা হলেও কিছুদিন ধরে তার দ্বিতীয় পত্নী সমিরুন নেসাকে নিয়ে মধুরবন্দ খিলোগ্রামে ছিল ভাড়াবাড়িতে। তার প্রথম পত্নীর নাম রোশনা বেগম। দালাল আমির হোসেনের মধ্যস্থতায় গুলজার এবং রোশনা বেগম মিলে সমিরুন নেছার পুত্রসন্তানকে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

সমিরুন নেসা পুলিশকে জানিয়েছেন, গত ২৭ অক্টোবর তিনি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। সন্তান সহ তাকে মেডিক্যাল থেকে রিলিজ করা হয় ৩ নভেম্বর। এরপর তিনি সন্তানকে নিয়ে চলে যান মধুরবন্দ খিলোগ্রামের ভাড়াবাড়িতে। ভাড়াবাড়িতে থাকা অবস্থায় গত ৭ নভেম্বর স্বামী গুলজার হোসেন তার প্রথম পত্নী রোশনা বেগম এবং দালাল আমির হোসেনকে নিয়ে সেখানে যান। আমির যে দালাল তখন তিনি জানতেন না। তারা সবাই মিলে কথাবার্তা বলে জানান, সন্তান সহ তাকে নিয়ে যাওয়া হবে রাতাবাড়ি বিহাইরডালার বাড়িতে। এতে তিনি অন্য কিছু ভাবতে পারেননি। খুশি মনেই শিশুসন্তানকে নিয়ে তাদের সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। গুলজার, রোশনা এবং আমির মিলে রাতাবাড়ি বিহাইরডালার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে শিলচর রামনগর আইএসবিটি-তে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে তাকে একটি বাসের  সিটে বসিয়ে সবাই মিলে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করেন। এরপর হঠাৎ করে গুলজার শিশুসন্তানকে নিয়ে একটু নিচে থেকে ঘুরে আসছেন বলে বাস থেকে নামেন। সঙ্গে নেমে যান আমির এবং রোশনাও। তখনও তার পক্ষে অন্য কিছু ভেবে ওটা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তারা অনেকক্ষণ না ফেরায় তার মনে প্রশ্ন জাগে। তিনি বাস থেকে নেমে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তিনজনের কাউকে পাননি। এরপর অনেক চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এই অবস্থায় তার আর বুঝতে বাকি থাকেনি যে, প্রতারণা করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শিশুসন্তানকে। এভাবে ঘটনার বয়ান দিয়ে সমিরুন নেসা এজাহার দায়ের করার পর তদন্তে নেমে পুলিশ বুধবার প্রথম গ্রেফতার করে আমির হোসেনকে। তার সূত্র ধরে উধারবন্দের দুর্গানগরে এক দম্পতির হেফাজত থেকে শিশুসন্তানকে উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে, যে দম্পতির হেফাজত থেকে শিশুসন্তানকে উদ্ধার করা হয়েছে তারা নিঃসন্তান। তাদের বাড়ি আরকাটিপুর এলাকায়। দুর্গানগরে মহিলার বাবার বাড়ি। বুধবার উদ্ধারের সময় সেখানেই তিনি ছিলেন শিশুসন্তানকে নিয়ে। আমির হোসেন গ্রেফতার হলেও শিশুসন্তানের বাবা অভিযুক্ত গুলজার হোসেন এবং সৎ মা রোশনা বেগম এখনও পলাতক। পুলিশ তাদের খোঁজ চালাচ্ছে।

পুলিশের সূত্র জানান, যে নিঃসন্তান দম্পতির হেফাজত থেকে শিশুসন্তানকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের কাছে শিশুসন্তানকে সমঝে দিয়েছিলেন আমির, গুলজার এবং রোশনারা। দম্পতির বয়ান অনুযায়ী, সমঝে দেওয়ার সময় তাদের বলা হয়েছিল, রোশনা ওই শিশুসন্তানের জন্মদাত্রী মা। স্ব-ইচ্ছাই তিনি সমঝে দিচ্ছেন শিশুসন্তানকে। বাস্তবে রোশনা যে শিশুসন্তানের জন্মদাত্রী মা নন, তা তারা জানতেন না। আর শিশুসন্তান? হস্তান্তরের পেছনে কোনও আর্থিক লেনদেনও হয়নি। যদিও পুলিশের সন্দেহ, এটা শিশু বিক্রির ঘটনা। এবং আমির এক্ষেত্রে দালালের কাজ করেছে। গ্রেফতারের পর পুলিশ বৃহস্পতিবার আমিরকে আদালতে পেশ করে। আদালতের নির্দেশে তাকে প্রেরণ করা হয়েছে জেল হাজতে। বর্তমানে গুলজার ও রোশনার খোঁজ চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *