বরাক তরঙ্গ, ২৮ ডিসেম্বর : মানবিকতা, প্রযুক্তি ও সম্মিলিত উদ্যোগ যে মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে—তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল আসাম বিশ্ববিদ্যালয়। কমিউনিটি হেলথকেয়ার আউটরিচ কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রোজকান্দি চা-বাগানের ৯ বছরের এক কন্যাশিশুর জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। ওই শিশুটি গুরুতর রক্তাল্পতা ও জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত ছিল।গতকালই নতুন দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে শিশুটির সফল ওপেন হার্ট সার্জারি সম্পন্ন হয়।
সম্প্রতি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে শিশুকন্যাটির হৃদ্যন্ত্রে বড় ধরনের ছিদ্র রয়েছে। চিকিৎসা শাস্ত্রে এর নাম অস্টিয়াম সেকেন্ডাম এট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট। অর্থনৈতিক দূরবস্থা ও সচেতনতার অভাবে শিশুটির চিকিৎসা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল, ফলে নিয়মিত স্কুলে যেতেও পারছিল না শিশুটি। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের উদ্যোগে ও নতুন দিল্লির আইসিএমআর-এনআইআরডিএইচডিএসের সহযোগিতায় ‘ডিপ লার্নিং ভিত্তিক শিশুদের রক্তাল্পতা নির্ণয় প্রকল্পের আওতায় রোজকান্দি ও আইরংমারা এলাকায় ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী এক হাজারেরও বেশি শিশু ও ৪০০ জন মহিলার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এই স্ক্রিনিংয়ের সময়ই শিশুটির অসুস্থতার বিষয়টি সামনে আসে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কাছাড়ের যুগ্ম স্বাস্থ্য অধিকর্তা, নতুন দিল্লির এইমস ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত পদক্ষেপ করে। টেলি-কনসালটেশন পরিষেবা ও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় পরিচালিত মাতা প্যাথোলজি ল্যাবের মাধ্যমে সফদরজং হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ পুনীত গুপ্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অনলাইন পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণের পর জরুরি ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক রাজীবমোহন পন্থের উদ্যোগে ও পরিসংখ্যান বিভাগের ড. বিবেক ভার্মার বিশেষ তৎপরতায় শিশুটির পরিবারকে দিল্লি পোঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়। এক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন রোজকান্দি চা বাগানের ম্যানেজার আই বি উবাদিয়া। অবশেষে গতকাল অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর ডা. পুনীত গুপ্তের তত্ত্বাবধানে সফদরজং হাসপাতালে শিশুটির সফল ওপেন হার্ট সার্জারি সম্পন্ন হয়। বর্তমানে শিশুটি সুস্থ ও সম্পূর্ণ আরোগ্যের পথে।
এই মহৎ উদ্যোগে যুক্ত সকল চিকিৎসক, প্রকল্পকর্মী ও সমাজের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নিবন্ধক ড. প্রদোষ কিরণ নাথ। ড. বিবেক ভার্মা সহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় গৃহীত এই উদ্যোগ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির এক অনন্য নিদর্শন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।


