১৫ ডিসেম্বর : সন্তানের জন্মের আগে প্রত্যেক বাবা-মায়েরই আশা থাকে যে তাদের সন্তান দেখতে হুবহু তাদের মতো হবে এবং তাদের গুণাবলী নিয়ে পৃথিবীতে আসবে। কিন্তু পরিস্থিতি যখন উল্টো হয়, তখন বাবা-মা সহ পরিবারের সকলে হতবাক হয়ে যান। ঠিক এমন একটি ঘটনা ঘটেছে চিনের জিয়াংজু প্রদেশে, যেখানে এক দম্পতি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
কিন্তু পরিবার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং বিপরীত চেহারা-রঙের জন্য সবাই অবাক হয়ে যান। আসলে, শিশুটির বাবা-মা চিনা এশীয় সম্প্রদায়ের, যেখানে সাধারণত মানুষের চুল কালো এবং চোখ গাঢ় কালো হয়। কিন্তু এই নবজাতকটি জন্ম নিয়েছে নীল চোখ এবং সোনালি চুল নিয়ে। এই রূপ দেখে পরিবারের সদস্যদের মনে নানা প্রশ্ন জাগতে শুরু করে। সব সংশয় দূর করার জন্য তারা ডিএনএ পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নেন। এই পরীক্ষার পর অনেক রহস্যের উন্মোচন হয়।
একটি এক্স পোস্ট অনুযায়ী, জিয়াংজুতে শিশুটির জন্ম হওয়ার পর ডাক্তার, নার্স এবং পরিবারের সকলে অবাক হয়ে যান। জিয়াংজু দম্পতির জন্ম দেওয়া শিশুটির রং, রূপ এবং চেহারা তাদের বাবা-মা ও পরিবারের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। সাধারণত, শিশুরা তাদের বাবা-মা ও পূর্বপুরুষদের গুণাবলী উত্তরাধিকার সূত্রে পায়, কিন্তু এই শিশুটি তার পরিবারের সম্পূর্ণ বিপরীত-সাদা ত্বক, সোনালি চুল এবং গাঢ় নীল চোখ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে।
সেই সময় পরিবার সহ নার্স এবং হাসপাতালের কর্মীরাও অবাক হয়েছিলেন যে, দুই পূর্ব এশীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের সন্তানের মধ্যে এত বিপরীত এবং ভিন্ন বৈশিষ্ট্য কীভাবে থাকতে পারে? এরপর পরিবারের সদস্যদের মনে এই সন্দেহও জাগে যে হাসপাতালের কোনো ভুলের কারণে হয়তো শিশু বদল হয়ে যায়নি। অনেক সংশয় ও সমস্যার পর বিষয়টি পুরোপুরি পরিষ্কার করার জন্য ওই দম্পতি অবিলম্বে পিতৃত্ব পরীক্ষা (ডিএনএ পরীক্ষা) করান। এই পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, এই শিশুটির জৈবিক বাবা-মা এই দম্পতিই। এখন পরিবারের সদস্যরা আরও বেশি বিস্মিত হন, কারণ এর আগে তাদের পরিবারে এমন বৈশিষ্ট্যের কোনও সন্তানের জন্ম হয়নি। যদিও সব সংশয় দূর হওয়ার পরে এই গল্পে একটি দারুণ মোড় আসে।
আসলে, তাদের পৈতৃক ইতিহাস গভীরভাবে অনুসন্ধান করার পর এই দম্পতি জানতে পারেন যে, এই শিশুটির প্রপিতামহ ছিলেন রুশ বংশোদ্ভূত এবং তার কাছ থেকেই শিশুটি এই সাদা রং এবং সোনালী চুল উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এই পরিবারে কোনো মেয়ের জন্ম হয়নি এবং এই কারণেই শিশুটি তার প্রপিতামহের সুপ্ত জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। মজার বিষয় হলো, পরিবারের কোনো সদস্যই এই বিষয়ে জানতেন না। যদিও এর পরে শিশুটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়, তবুও এই পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়। মানুষজন এই পোস্টে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়াও দেন। অনেক ব্যবহারকারী এই ঘটনা নিয়ে মজা করেছেন, আবার কেউ কেউ এর পিছনে থাকা বিজ্ঞানেরও উল্লেখ করেছেন।
এই ঘটনার পরে মানুষজন এটিকে এটাভিজম নামেও অভিহিত করেন। এটি একটি জৈবিক ধারণা যা শুনতে যতটা কঠিন মনে হয়, এর আসল অর্থ ততটাই মজার। এটাভিজম এমন একটি অবস্থা যখন কোনও জিনের (Gene) সুপ্ত গুণ হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে। সহজ ভাষায় বললে, আপনার দাদা-প্রপিতামহের কোনো বিরল বৈশিষ্ট্যের ঝলক হঠাৎ আপনার মধ্যে বা আপনার সন্তানের মধ্যে দেখা যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় যে, সন্তান তার বাবা-মায়ের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনো বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যেমন চুলের ভিন্ন রং, ত্বকের ধরন বা সবুজ-নীল চোখ। এই বৈশিষ্ট্য আসলে বাবা-মা থেকে নয়, বরং তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জিনের (Gene) প্রভাবে ঘটে। বিজ্ঞানের চোখে দেখলে এটি একটি খুবই আকর্ষণীয় ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হয় এবং এমনটা হাজার হাজার ক্ষেত্রে মাত্র একবারই ঘটে।
খবর : বার্তা.in


