দৈনিক-এর সম্পাদক মনোমোহন মিশ্রের স্মরণসভা করিমগঞ্জে

দৈনিক-এর সম্পাদক মনোমোহন মিশ্রের স্মরণসভা করিমগঞ্জে

মোহাম্মদ জনি, করিমগঞ্জ।
বরাক তরঙ্গ, ৯ এপ্রিল : একজন সাংবাদিকের উদ্দেশ্য হলো সমাজের পক্ষ উদ্ধার করা। অর্থাৎ সমাজের যে কিছু মালিন্য আছে, তা দূর করার চেষ্টা করা। এই ব্রত উদযাপনের মহান উদ্দেশ্য নিয়েই মনোমোহন মিশ্র সাংবাদিকতায় জীবন শুরু করেছিলেন। তাঁর প্রয়াণ সংবাদপত্র জগতে অপূরণীয় ক্ষতি। মঙ্গলবার বিপিনচন্দ্র পাল স্মৃতি ভবনে প্রেসক্লাব করিমগঞ্জ আয়োজিত সদ্য প্রয়াত গতি দৈনিক-এর সম্পাদক মনোমোহন মিশ্রের স্মরণসভায় উপস্থিত থেকে কথাগুলি বলেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা করিমগঞ্জ প্রেস ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি সতু রায়। সংবাদপত্রকে সমাজের পক্ষ উদ্ধারের কাজে নিয়োজিত রাখার জন্য চেষ্টা করতে সাংবাদিকদের কাছে আহ্বান জানান তিনি।

সতু রায় বলেছেন, প্রয়াত মনমোহন মিশ্র সাংবাদিকতা জীবন প্রথমে শুরু করেছিলেন দৈনিক যুগশঙ্খে। পরবর্তীতে তিনি গতি দৈনিককে যান। বিভিন্ন সংবাদপত্রে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন সংবাদ জগতকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, যে পর্যায়ে গেলে দেশ এবং জাতির উন্নতি হয়। তার লেখনির মাধ্যমে সমাজকে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রে নয়, সামাজিকস্তরেও আজকে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কীভাবে পূরণ করতে হবে তার পথ নির্দেশ পাওয়া গেছে তার লেখনির মাধ্যমে। লেখা ছিল অসাধারণ। তার লেখার মাধ্যমে তিনি অসমের সার্বিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। আজকাল তা তেমন চোখে পড়ে না।

দৈনিক-এর সম্পাদক মনোমোহন মিশ্রের স্মরণসভা করিমগঞ্জে

তিনি আরও বলেছেন, দেশপ্রেমের বন্যায় দেশ ভেসে যাচ্ছে। মানুষের কথা কেউ ভাবে না। সেই মানুষের কথা ভাবার জন্যই তো সংবাদপত্র। কিন্তু বর্তমানে মিডিয়ার যে স্খলন, সেটা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক পরিস্থিতি। এ কথাটাই প্রয়াত মিশ্র আমাদের বারবার স্মরণ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ ধরনের সাংবাদিকরা যদি একে একে যেতে থাকেন তাহলে গণতন্ত্রের প্রিয় মানুষ দাঁড়াবে কোথায়, কার কাছে আশ্রয় গ্রহণ করবে, এই প্রশ্ন তুলেন তিনি। সংবাদপত্রকে সমাজের পক্ষ উদ্ধারের কাজে নিয়োজিত রাখার জন্য চেষ্টা করে যেতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান সতু রায়।
 
সতু রায় আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছেন, বিজ্ঞাপন সর্বস্ব পত্রিকাগুলি ভুলে গেছে তাদের দায়িত্বের কথা। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। প্রসঙ্গক্রমে নোবেল বিজয়ী কাম্মু তার বন্ধু নাতসিকে দেওয়া উত্তরের কথা বলেছেন সতু রায়। বলেছেন, সর্বক্ষেত্রে যখন আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছি, এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মিডিয়া সেই দায়িত্বটুকু পালন করতে পারছে না। দেশের সংবাদপত্রের একটা গৌরবময় অতীত ছিল। দেশ স্বাধীনতার পরেও সংবাদপত্রের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে ধীরে ধীরে সংবাদপত্র জগতে একটা স্খলন ঘটেছে। প্রয়াত মিশ্রের সারা জীবনের সাধনার ইতিহাস যদি আমরা রোমন্থন করি তাহলে দেখতে পাবো যে, সাংবাদিকতাকে তিনি গ্রহণ করেছিলেন সমাজসেবা হিসেবে। 

করিমগঞ্জ বিপিন চন্দ্র পাল স্মৃতি ভবনে প্রেস ক্লাব করিমগঞ্জের সভাপতি মিহির দেবনাথের পৌরহিত্য সভায় মনমোহন মিশ্রের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলী,ও প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে স্মরণ সভার সূচনা করেন, উপ সভাপতি অরূপরতন চক্রবর্তী, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের শহর সমিতির সভাপতি সৌমিত্র পাল, অমৃত বণিক, করিমগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি গৌরিস নন্দি সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী, প্রেস ক্লাব করিমগঞ্জের এস এম জাহির আব্বাস, বিভাস চন্দ্র দাস, শুভ দাস, সাংবাদিকদের মধ্যে রোহন মালাকার, জয়দীপ দাস, শুভঙ্কর মালাকার, সুজিত দাস,
প্রমুখ। আলোচনায় অংশ নেন প্রেস ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি সতু রায়,ছাড়া সৌমিত্র পাল, কংগ্রেস নেতা তাপস পুরকায়স্থ, অমৃত বণিক, ছন্দা দাম, শুভ দাস, জুলি দাস, পার্থ দাস প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন ও শোকসভার সঞ্চালনা করেন প্রেস ক্লাবের সম্পাদক অরূপ রায়।

Author

Spread the News