আইনি প্রক্রিয়ায় বিয়ে সম্পন্ন করে পণ দাবি, বরকে প্রত্যাখান কনের, দুই পক্ষের পয়লাপুল থানায় মামলা

বরাক তরঙ্গ, ১৭ ডিসেম্বর : আইনি প্রক্রিয়ায় বিয়ে সম্পন্ন করে পণ দাবি করা নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড ঘটল। পণ দাবিতে বরকে প্রত্যাখানের পাশাপাশি দীর্ঘ সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করলেন কনে। এমন কাণ্ডে বর ও কনে উভয় পরিবার মামলা পাল্টা মামলা করেন থানায়। ঘটনাটি লক্ষীপুরের পয়লাপুর এলাকার। এই সাহসী কন্যা আর কেউ নন শিলচর জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপকুমার দে-র মেয়ে।

জানা যায়, বিয়ের বিজ্ঞাপনের সাইটে প্রবাসী ভারতীয় এক ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয় প্রদীপকুমারের মেয়ে অরুনিমা দে-এর। এরপর দুই পরিবারের মধ্যে আলাপ করে বিয়ে আয়োজন হয়। বিয়ের দিন অবদি সব ঠিকঠাক ছিল। বিয়ের আসরে দাঁড়িয়ে মেয়ের বাবার কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পণ চেয়ে বসে ছেলের পরিবার। এর প্রতিবাদে কনে বিয়ের আসরেই ছেলেকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেন।

অরুনিমা একজন ব্যাঙ্ক কর্মচারী এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে মহারাষ্ট্রে কর্মরত রয়েছেন। গতবছর এক বিয়ের বিজ্ঞাপনের সাইটে তার সঙ্গে পরিচয় হয় লন্ডনে কর্মরত কলকাতার দমদম মৃন্ময় সেনগুপ্ত নামে এক যুবকের সঙ্গে। মৃন্ময়ের বাবা মলয় সেনগুপ্ত প্রাক্তন ব্যাঙ্ক কর্মচারী। পরবর্তীতে দুই পরিবারের মধ্যে কথাবার্তা হয় এবং মলয় সেনগুপ্ত এবং তার পরিবারের লোকেরা এবছর জুন মাসে অরুনিমার বাড়িতে এসে বিয়ের কথা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন। জুলাই মাসে প্রদীপ দে এবং তার পরিবারের লোকেরা কলকাতা গিয়ে ছেলের বাড়িও দেখেন। সেখানেই বিয়ের দিন ঠিক হয়।

প্রদীপ দে জানিয়েছেন, বিয়েতে অংশ নেওয়ার জন্য বরের সঙ্গে ১২ জন বরযাত্রী শুক্রবার শিলচরে আসেন। শহরে এক হোটেলে তাদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এ দিন সন্ধ্যেবেলা তারা শিলচর থেকে গাড়ি করে পয়লাপুল যান। আগে পণের কথা উল্লেখ না করলেও বিয়েবাড়িতে এসে তাদের মন পাল্টে যায়। প্রদীপ বলেন, ‘শুক্রবার বেশ কয়েকটি লগ্ন ছিল, তবে তারা এসেই তাড়াতাড়ি বিয়ে শেষ করার কথা বলে। হিন্দু রীতি মেনে বিয়ে হচ্ছিল এবং সেখানে আমাদের কিছু লোকাচার ছিল। তারা এসব কিছুই মানতে রাজি ছিলেন না, শুধু তাড়াতাড়ি বিয়ে শেষ করে কনেকে নিয়ে হোটেলে চলে যাওয়ার কথা বলছিলেন। এমনকি বিয়ে বাড়িতে খাবেন না বলেও জানান তারা। তাঁরা প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তাদের বিয়ের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি। এরপর ছেলের পরিবারের আসল রূপ দেখা যায়। ছেলের বাবা পণ হিসেবে দশ লক্ষ টাকা দাবি করেন। এতে তাঁরা  প্রতিবাদ করেন। ছেলের বাবা হুমকিস্বরূপ বলেন, দু’মিনিটে ডিভোর্স করিয়ে দেবেন।’

অরুনিমা বিষয়টি দেখে প্রতিবাদ করেন এবং ছেলেকে আলাদা ডেকে নিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি বুঝিয়ে বলেন, অসমে পণপ্রথা নেই তবে ছেলে সে কথা মানতে রাজি হয়নি। অরুনিমা বলেন, ‘তারা আগে এবিষয়ে কোনও কথা বলেনি, তবে আমি যখন মৃন্ময়কে নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলতে চাই সে একই উত্তর দেয়। সে বলে, বিয়েতে যখন আমার বাবা এত টাকা খরচ করতে পারছেন তাহলে এটুকু পণ দিতে তার সমস্যা কোথায়? এতে তিনিও প্রতিবাদ করেন এবং পরিবারের লোকেদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন এই বিয়ে করবেন না। এও বলেন, তারা শুধুমাত্র পণ দাবি করেছে এমনটা নয়, তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে এবং শেষমেষ চূড়ান্ত অপমান করে বেরিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে আমার মনে হয়েছে এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তাই আমরা মামলা করেছি।’

এদিকে ছেলের বাড়ির লোকেরাও প্রদীপ দে এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, কনের বাড়ির অহেতুক নিয়মের ফলে বিয়ের লগ্ন পেরিয়ে গেছে। তারা প্রতিবাদ করায় তাদের ভয় দেখানো হয়েছে এবং প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, দু’পক্ষের কাছ থেকেই তারা অভিযোগ পেয়েছেন এবং গোটা বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।

Author

Spread the News