মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৩ ডিসেম্বর : পাথারকান্দির শিক্ষাঙ্গনে এক যুগের অবসান অবসর নিলেন প্রধান শিক্ষক নরেন্দ্র দাস ৩৫ বছরের আলোকিত পথচলার সমাপ্তি প্রেমময়ী স্কুলে নরেন্দ্র দাসকে সংবর্ধনা শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে অমলিন বিদায়ী সংবর্ধনায় সম্মানিত হলে নরেন্দ্র দাস।পাথারকান্দির শিক্ষাঙ্গনে এক আবেগঘন অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল ৩০ নভেম্বর, ২০২৫-এ। প্রেমময়ী সিনিয়র বেসিক স্কুলের দীর্ঘদিনের প্রধান শিক্ষক, সুদীর্ঘ ৩৫ বছরের অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ নরেন্দ্র দাস আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর চাকরি জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বিদ্যালয়ের রূপান্তর, উন্নয়ন ও শিক্ষার মানোন্নয়নে তাঁর নিরলস পরিশ্রম আজ শিক্ষাজগতের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবনে যোগদান করা নরেন্দ্র দাস ধীরে ধীরে নিষ্ঠা, শ্রম ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে স্কুলের অন্যতম স্তম্ভে পরিণত হন। সময়ের সাথে সাথে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং টানা কয়েক দশক ধরে স্কুলকে সুসংগঠিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যান।শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর স্নেহ, শিক্ষকদের প্রতি নেতৃত্বগুণ এবং প্রতিষ্ঠানটিকে গঠনের প্রতি অদম্য মনোযোগ তাঁকে সকলের শ্রদ্ধার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
উক্ত অবসর উপলক্ষে গতকাল প্রেমময়ী সিনিয়র বেসিক স্কুলে এক প্রাণবন্ত বিদায়ী সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্কুল পরিচালন সমিতি এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে প্রিয় শিক্ষককে সম্মান জানান। সংবর্ধনা সভায় ফুল, উপহার সামগ্রী এবং মানপত্র দিয়েনরেন্দ্র দাসকে বিদ্যালয়ের প্রতি তাঁর অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিশাখা সরকার মঞ্চে উঠে বিদায়ী মানপত্র পাঠ করে শোনান। এরপর স্কুলের পক্ষ থেকে সহকারী শিক্ষক নবীন চন্দ্র সরকার ও মনোজ কুমার সিনহা আনুষ্ঠানিকভাবে মানপত্রটি নরেন্দ্র দাসের হাতে তুলে দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্টজনরা নরেন্দ্র দাসের কর্মময় জীবন নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। বক্তারা বলেন, শিক্ষকতা তাঁর কাছে ছিল পেশা নয়, প্রণাম। দায়িত্ববোধ, সততা ও মানবিকতার বিরল সমন্বয় দেখা গেছে তাঁর পুরো কর্মজীবনে।স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষা-শৃঙ্খলাপ্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর প্রচেষ্টা প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। বক্তাদের মতে, তাঁর অবসরে ছাত্রছাত্রীদের এক আদর্শ ও অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্বের শূন্যতা তৈরি হলো। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিদায়ী প্রধান শিক্ষক নরেন্দ্র দাস আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলের নবনিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সুনিতা সিনহা-র হাতে দায়িত্বভার অর্পণ করেন। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাঁর বক্তব্যে নরেন্দ্র দাসের কর্মজীবনকে অনুসরণযোগ্য আদর্শ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং স্কুলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবক তথা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সঞ্জীব দেবনাথ, সুমিত্রা সিংহ, সিআরসি ইসমাইল আহমেদ, রশিদুজ্জামান চৌধুরী, জাহানারা সুলতানা খান, সন্দীপা সিনহা ঘোষ, বেগম সাকিবা নার্গিস, সুনীল সিংহ, বিশ্বজিৎ সিংহ, সহকারী শিক্ষক অর্পিতা শীল, আব্দুল হামিদ, মুকব্বির আলি, স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি মখলিছুর রহমান, সদস্য ছাদ উদ্দিন, জয়া সরকার প্রমুখ।অনুষ্ঠান শেষ হলেও উপস্থিত সকলের মনে রয়ে গেল আবেগভরা স্মৃতি। একজন সৎ, মানবিক ও দায়িত্বপরায়ণ শিক্ষকের বিদায় শিক্ষাঙ্গনকে যেমন ব্যথিত করেছে, তেমনি তাঁর গড়া পথ আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।


