২৭-২৯ নভেম্বরে সৰ্বভারতীয় ছাত্ৰ সন্মেলন এআইডিএসও-র
বরাক তরঙ্গ, ২৩ নভেম্বর : ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও’র দশম সৰ্বভারতীয় ছাত্ৰ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নয়া দিল্লির তালকোটরা স্টেডিয়ামে আগামী ২৭-২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। শনিনার গুয়াহাটির প্রেস ক্লাবে এআইডিএসও’র অসম রাজ্য কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে প্রজ্জ্বোল দেব ও হেমন্ত পেগু এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, চূড়ান্ত শিক্ষা বিরোধী, জনবিরোধী জাতীয় শিক্ষা নীতি- ২০২০ অবিলম্বে বাতিল করা এবং সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা রক্ষার দাবীতে সংগঠনের সৰ্বভারতীয় ছাত্ৰ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হেমন্ত পেগু বলেন, জাতীয় শিক্ষা নীতি -২০২০ শিক্ষার ব্যবসায়ীকরণ, সাম্প্ৰদায়িকীকরণ ও কেন্দ্ৰীয়করণের নীল নকশা। কেন্দ্ৰ ও বিভিন্ন রাজ্যের সরকার ইতিমধ্যে এই নীতি কাৰ্যকর করার পর এর কুফল ও চূড়ান্ত শিক্ষা বিরোধী রূপ জনসমক্ষে ফুটে উঠছে। এই নীতি সম্পূর্ণভাবে কাৰ্যকর হ’লে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই সংগঠনের দশম সর্বভারতীয় সন্মেলনে জাতীয় শিক্ষা নীতি -২০২০ এর বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশদ পৰ্যালোচনা হবে এবং এই নীতি বাতিল করতে কেন্দ্ৰীয় ও রাজ্য সরকারকে বাধ্য করাতে দেশব্যাপী দীৰ্ঘস্থায়ী, ধারাবাহিক আন্দোলন গড়ে তোলার কাৰ্যসূচী গ্ৰহণ করা হবে।
তিনি বলেন, দশম সৰ্বভারতীয় ছাত্ৰ সন্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশের উদ্বোধন করবেন প্ৰখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ইরফান হাবিব। সংগঠনের সৰ্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সৌরভ ঘোষের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক চমনলাল, সংগঠনের প্ৰাক্তন সৰ্বভারতীয় সভাপতি অরুণ কুমার ও বৰ্তমান সভাপতি ভিএন রাজশেখর। ২৮ নভেম্বর তালকাটোরা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে প্ৰতিনিধি সম্মেলন। সেখানে বিভিন্ন দেশের সংগ্ৰামী ছাত্ৰ নেতারা তাদের নিজ দেশের ছাত্র আন্দোলনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন। এছাড়াও তাঁরা আমাদের দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সাথে মত বিনিময় সভায় অংশ নেবেন। প্রতিনিধি সভায আই আই টি মুম্বাইয়ের প্ৰাক্তন অধ্যাপক রাম পুনিয়ানী, মেঘালয়ের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ওয়াণ্ডেল পাসা, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ৰাক্তন উপাচাৰ্য অধ্যাপক জমির উদ্দিন সাহ, জেএসএস টেকনোলজিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ৰাক্তন উপাচাৰ্য অধ্যাপক এল জহর নেশন, হিমাচল প্ৰদেশের কেন্দ্ৰীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ৰাক্তন উপাচাৰ্য অধ্যাপক নভনীত শৰ্মা, স্বাস্থ্য আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা ও প্ৰাক্তন সাংসদ ডা° তরুণ মণ্ডল প্রমুখ বক্তব্য রাখবেন।
সম্মেলনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উদ্ধৃতি প্রদর্শনী, চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন যথাক্রমে বিশিষ্ট কবি গৌহর রাজা, জেএইউ এর প্ৰাক্তন অধ্যাপক অরুণ কুমার ও দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ৰাক্তন অধ্যাপক নন্দিতা নারায়ণ।
এছাড়াও বিভিন্ন আন্দোলনের ফটো প্ৰদৰ্শনীর উদ্বোধন করবেন জেএনইউ প্ৰাক্তন অধ্যাপক সচ্ছিদানন্দ সিনহা। প্ৰতিনিধি সম্মেলনের অন্তিম দিন বক্তব্য রাখবেন এআইডিএসও’র প্ৰতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও এসইউসি আই (সি) দলের সাধারণ সম্পাদক প্ৰভাস ঘোষ।
সংগঠনের রাজ্য সভাপতি প্ৰজ্জ্বোল দেব বলেন, সংসদে কোনো ধরনের আলাপ -আলোচনা না করেই জাতীয় শিক্ষা নীতি -২০২০ দেশের জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও সংগঠনের পক্ষ থেকে অনলাইন ও অন্যান্য পন্থা অবলম্বন করে এই শিক্ষা বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে প্ৰতিবাদ সাব্যস্ত করা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে তখনই ব্যখ্যা করে দেখানো হয় যে জাতীয় শিক্ষা নীতি -২০২০ শিক্ষার ব্যবসায়ীকরণ ও সাম্প্ৰদায়িকীকরণের প্ৰক্ৰিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। এই শিক্ষা নীতি সরকারি শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও পরিকাঠামোর চূড়ান্ত অভাব, শিক্ষার মানের অবনমন ও অর্থের অভাব মেটানো নিয়ে কোনো কথা দিক নির্দেশনা প্রদান করেনি।এই শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে সমগ্ৰ দেশ থেকে প্ৰায় ১ কোটি স্বাক্ষর সংগ্ৰহ করে প্ৰধানমন্ত্ৰীর নিকট প্রদান করা হয়। এর পর দেশের ৪ টি ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে আঞ্চলিক ছাত্ৰ অভিবৰ্তনের আয়োজন করা হয়।
৯ ডিসেম্বর, ২০২২ সালে গুয়াহাটিতে উত্তর পূৰ্বের রাজ্যগুলির ছাত্ৰ অভিবৰ্তন আয়োজিত হয়। এই অঞ্চলের প্ৰতিটি রাজ্য থেকে এতে ছাত্র ছাত্রীরা অংশগ্ৰহণ করে। এর পর সমগ্ৰ দেশে ধারাবাহিকভাবে ছাত্ৰ ও শৈক্ষিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ অত্যন্ত দুৰ্ভাগ্যের বিষয় এই অতীব সৰ্বনাশা আক্ৰমণের বিরূদ্ধে প্ৰতিষ্ঠিত ছাত্ৰ সংগঠনগুলো কাৰ্যত নীরব। এই আন্দোলনের প্ৰতি সমৰ্থন জানিয়ে দেশের প্ৰতিটি রাজ্য ও কেন্দ্ৰশাসিত অঞ্চলগুলোর প্ৰতিনিধিরা এই ঐতিহাসিক সন্মেলনে অংশগ্ৰহণ করবে।
এই সন্মেলনে আসামের ১৩০ জন প্ৰতিনিধি ২৫ নভেম্বর নয়া দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। অসমের পার্শ্ববর্তী রাজ্য যথাক্রমে মেঘালয়, অরুণাচল প্ৰদেশ, ত্ৰিপুরা, মিজোরাম, নাগালেণ্ড ও মণিপুর থেকেও প্ৰতিনিধিরা সন্মেলনে যোগ দেবে।