কেন চাই পৃথক বরাক (পর্ব-২)

প্রদীপ দত্তরায়,
মুখ্য আহ্বায়ক, বিডিএফ
৩ অক্টোবর : প্রসঙ্গ ৩, হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে বরাকের একাংশ যারা দেশভাগের অনেক আগে থেকেই এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা তাঁরা দেশভাগের শিকার হয়ে যে সমস্ত বাঙালি এই উপত্যাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের বহিরাগত মনে করেন। পৃথকীকরণ হলে এই বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য আরো বাড়বে বলে তারা পৃথকীকরণের বিপক্ষে আওয়াজ তুলছেন।

এই প্রসঙ্গে আমাদের নিবেদন
১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল অব্দি পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসামে মোট উদ্বাস্তু এসেছেন ৬.৯০ লক্ষ (তথ্যসূত্র – ১৯৬৮ তে মাননীয় সাংসদ মহীতোষ পুরকায়স্থ এর এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় মন্ত্রীর বক্তব্য)। ১৯৬৮ তে বর্তমান মেঘালয় ও মিজোরাম রাজ্য আসামের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই উদ্বাস্তুদের কাছাড় জেলা ছাড়া পুণর্বাসন দেওয়া হয়েছিল মূলত সংযুক্ত খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড় জেলায় (বাঙালি ও হাজং), লুসাই পাহাড় জেলায় (চাকমা), গারো পাহাড় জেলায় ( হাজং ও গারো) এবং গোয়ালপাড়া জেলায় (বাঙালি ও হাজং)। বরাক উপত্যকায় বড়জোর চার লক্ষের পুনর্বাসন হয়েছিল। তাই  বরাকে যে প্রচুর রিফিউজি এসেছেন এই কথাটি মিথ্যা। এছাড়া এই উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন দিতে ভারত সরকার আইনগত ও নীতিগত ভাবে দায়বদ্ধ ছিল। এবং ছিন্নমূল এইসব মানুষেরা নিজেদের অদম্য জেদ, শ্রম ও মেধা দিয়ে শূন্য থেকে নিজেদের যেমন উন্নত করেছেন তেমনি এই উপত্যাকার সর্বাঙ্গীন বিকাশের পথ প্রশস্ত করেছেন।

যারা এইধরণের প্রসঙ্গ তুলেন এটা বোঝা মোটেই কঠিন নয় যে তাঁরা একধরনের হীনমন্যতায় ভোগেন। দেশভাগের দায় সাধারণ মানুষের ছিল না। ঠিক করেছিলেন নেতারা। সিলেট গনভোটে যারা ভারতে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, যারা মনেপ্রাণে ভারতীয় বলে নিজেদের মনে করতেন রেডক্লিফের কলমের এক আঁচড়ে তাঁরা হয়ে গেলেন বহিরাগত ! এ কেমন যুক্তি !

এই প্রসঙ্গে আরও বলতে হয় যে যদি নিজেদের মধ্যে এইধরণের বিভাজনে মদত দেওয়া হয় তবে অসমিয়া আধিপত্যবাদীরা কিন্তু এই বিভেদকামী মানসিকতারই সুযোগ নিয়ে এই উপত্যাকায় নিজেদের খুশিমতো অধিকার কায়েম করবেন। ভবিষ্যতে এই তথাকথিত স্থানীয়, বহিরাগত উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার আরো সঙ্কুচিত হতে থাকবে। দিশপুরর নেতৃকুল কিন্তু কাউকেই ভূমিপুত্রের মান্যতা দেবে না। ব্রহ্মপুত্র উপত্যাকায় যারা অসমিয়াকে মাতৃভাষা লিখিয়েছিলেন এতকাল পরেও তারা কিন্তু অসমিয়া হয়ে উঠতে পারেননি, মিঞা বলে আজো তাদের ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। জাতিগত নিপীড়ন থেকে তাঁদের অব্যাহতি জোটেনি। এ থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। (চলবে)

Author

Spread the News