ছটপূজার জোরদার প্রস্তুতি পাথারকান্দির বিভিন্ন অঞ্চলে

মোহাম্মদ জনি, করিমগঞ্জ।
বরাক তরঙ্গ, ৫ নভেম্বর : প্রতিবারের মত এবারও পাথারকান্দির বিভিন্ন স্থানে ছটপূজা পালনের জোর প্রস্তুতি চলছে। বিশেষ করে এলাকার বিভিন্ন হিন্দি ভাষাভাষী জনগণের বাড়িতে একক কিংবা যৌথভাবেও ছট পূজা আয়োজনের খবর পাওয়া গেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে সঙ্গী করে এবারও স্থানীয় ভক্তরা মেতে উঠেছেন ছট পূজার আয়োজনে। বুধবার খরনা ব্রত পালন করা হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে অস্তগত সূর্যদেবকে জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যা অর্ঘ্য প্রদান করবেন ভক্তরা। পরদিন শুক্রবার কাকভোরে ভক্তরা উদীয়মান সূর্যদেবের সামনে জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে ঊষাঅর্ঘ্য নিবেদন করে ছট পূজা সম্পন্ন করবেন। নিয়ম মতে, চারদিন এই পূজা পালিত হয়। পূজায় জলের একান্ত প্রয়োজন থাকায় আয়োজকরা নিজ নিজ এলাকার বিভিন্ন জলাশয়, নদী, পুকুর কিংবা ফিশারির ঘাট যথাসাধ্য সাজিয়ে তুলছেন। এতে বিশেষ করে পাথারকান্দির ইচাবিল বৈঠাখাল, চান্দখিরা, মেদলি, পুতনি, চম্পাবাড়ি, পাথারকান্দি, ভূবরিঘাট, তিলভূম, আদমটিলা, সোনাখিরা, হাতিখিরা, সলগই, হরিবাসর, লোয়াইরপোয়া, শিবেরগোল বিশনম্বর প্রবৃতি স্থানের জনগণের মধ্যে বাড়তি উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়।

এদিকে, পূজা উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকবে বলেও খবর পাওয়া গেছে। আগে ছট পূজা বিশেষ করে হিন্দি বলয়ের জনগণ পালন করলেও তা কালক্রমে অন্যান্য সনাতনী লোকদের মধ্যেও প্রসিদ্ধ হয়ে উঠে। শাস্ত্রে কথিত আছে, ছট পূজা পালন করলে ভক্তদের মঙ্গল সহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধিও দূর হয়। তাই এ পূজায় অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত ভক্তদের শামিল হয়ে সূর্যদেবের আরাধনা করতে দেখা যায়। ছট শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘আলোর ছটা’ বা ‘সূর্যকিরণ’। যা ব্যতিত এ
পৃথিবীতে কোনও প্রাণীর জীবনধারণ সম্ভব নয়। সনাতনী বাঙালিরা এই পূজাকে বিশেষ তিথিতে সূর্যব্রত হিসাবেও পালন করে থাকেন। খুবই কঠিন ও সংযমের পূজা হচ্ছে ছট পূজা। শাস্ত্র মতে, জগৎ কল্যাণে পৃথিবীর মূল উৎস সূর্য দেবকে প্রিয় ভক্তরা যুগ যুগ ধরে বিশেষ চালিকা শক্তির প্রতীক জ্ঞানে পূজা করে আসছেন।

কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের পতিহার ষষ্ঠী তিথিতে ছট পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ছট বা ছটী দেবী মূলত ব্ৰহ্মার মানস কন্যা। তিনি সৃষ্টির ষষ্ট অংশ থেকে সৃষ্টি বলে তাকে ছটী দেবীও বলা হয়। তিনি আবার সূর্যদেবের বোনও। তাকে পুজো দিলে নিঃসন্তানের সন্তান লাভ সহ জটিল রোগ-মুক্তি ও মানব জীবনের কল্যাণ সাধিত হয় বলে শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। ছট পূজায় সূর্যদেব সহ সূর্যদেবের দুই স্ত্রী ঊষা ও প্রত্যুষারও পূজা দেওয়া হয়। চারদিন ধরে চলে পূজা। দু’দিন ধরে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ভক্তরা উপোস ব্রত পালন করে ছট পূজা করেন। প্রথম রাতে লাউয়ের সবজি খেয়ে রাত কাটান। পরদিন ফের উপোস থেকে মিষ্টিদ্রব্য ভক্ষন করে সূর্যদেবকে বোধন করে থাকেন। তবে ছট পূজার মূল আয়োজন হয় পতিহার ষষ্ঠী তিথিতেই। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিকেলে সূর্য অস্ত যাবার প্রাক মুহূর্তে মূল অনুষ্ঠানটি পালিত হবে। এতে সাধ্য অনুযায়ী ভক্তরা বিভিন্ন সুসজ্জিত ঘাটে ফলমূলের নৈবদ্য সহ ঠেকুয়া সাজিয়ে ভগবান সূর্য সহ ছট দেবীকে অস্তাচলে যাবার আগ পর্যন্ত হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করবেন। পরদিন শুক্রবার সূর্যদেবের উদয়ের আগে অনুরূপভাবে ভক্তরা ঘাটে ঘাটে উপস্থিত হয়ে ছটদেবীর পূজা নিবেদন করে কায়মনচিত্তে জগতের মঙ্গল কামনা শেষে প্রসাদ গ্রহণের মধ্য দিয়ে উপোস ব্রত সম্পন্ন করবেন। পূজায় কোনও মূর্তি রাখা না হলেও পটে আঁকা ছট দেবী ও সূর্যদেবের ছবি রাখা হয়।বৃহত্তর এলাকায় নির্বিঘ্নে এই উৎসব পালনের জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও তৈরি বলে খবর পাওয়া গেছে।

ছটপূজার জোরদার প্রস্তুতি পাথারকান্দির বিভিন্ন অঞ্চলে
ছটপূজার জোরদার প্রস্তুতি পাথারকান্দির বিভিন্ন অঞ্চলে

Author

Spread the News