খেলার সময় এনএম গুপ্ত টুর্নামেন্ট বিশেষ সংখ্যার উন্মোচন
শিলচরে ক্যাপ্টেন এন এম গুপ্ত ট্রফি ফুটবল হোক বারবার, আলোচনায় মত সবার
ইকবাল লস্কর, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ২৬ নভেম্বর : ক্যাপ্টেন নলিনী মোহন (এনএম) গুপ্ত ট্রফি ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে প্রত্যাশার মাপকাঠি অনেক উপরে। কাজেই মর্যাদার এই টুর্নামেন্ট প্রতিবার শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজন করুক। মঙ্গলবার শিলচর ডিএস এ-র ক্রিকেট প্যাভিলিয়নে “খেলার সময়” ক্রীড়া ম্যাগাজিন আয়োজিত “ক্যাপ্টেন এন এম গুপ্ত ট্রফি ফুটবল প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি” শীর্ষক আলোচনায় এই মত প্রকাশ করলেন জেলার ক্রীড়াবোদ্ধা সংগঠক ও সাংবাদিকরা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি শিবব্রত দত্তের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত এদিনের সভার শুরুতে উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতে গিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজক তথা ক্রীড়া ম্যাগাজিনের সম্পাদক তাজ উদ্দিন জানান, ক্যাপ্টেন এন এম গুপ্ত ট্রফি ফুটবল আয়োজক কমিটির মিডিয়া সাব-কমিটির সদস্য হিসেবে প্রতিযোগিতা নিয়ে একটি স্বরণিকা প্রকাশের বিষয়টি তার মাথায় আসে। বিষয়টি তিনি ডিএসএ-র সভাপতি ও সচিবকেও জানান। তার প্রস্তাবকে সমর্থন তারা জানালেও সময়ের স্বল্পতার জন্য ঝুঁকি নিতে পারেননি। এই অবস্থায়, তার নিজস্ব ক্রীড়া ম্যাগাজিন ‘খেলার সময়’-এর মাধ্যমে ক্যাপ্টেন এন এম গুপ্ত ট্রফি ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে বিশেষ এক সংখ্যা ছাপার উদ্যোগ নেন। চেয়েছিলেন প্রতিযোগিতা ফাইনালের দিন সেটা উন্মোচন করবেন। পরে টুর্নামেন্ট ফাইনালটিও দুই মলাটে বাঁধিয়ে নেয়ার বাসনায় উন্মোচনের সময় পিছিয়ে নেন। সম্পাদক তাজ বলেন, কিছুটা দেরি হওয়াতে একদিকে ভালো হয়েছে, ম্যাগাজিনে পুরো প্রতিযোগিতা লিপিবদ্ধ সম্ভব হয়েছে। আর এনিয়ে এক আলোচনাও আজ সম্ভব হল।
সভার শুরুতে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখতে গিয়ে বর্ষীয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক তথা বরাক উপত্যকা ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রিতেন ভট্টাচার্য বলেন, তিন টাকার সিজন পাস নিয়ে ১৯৭০, ৭১ সাল থেকে এই খেলা দেখে আসছেন। তিনি বলেন, এন এম গুপ্ত ট্রফি ফুটবল টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে না। করিমগঞ্জের আর কে জৈন ফুটবলেরও জনপ্রিয়তা ছিল। কিন্তু গত ৩০ বছর থেকে সেটা হয়নি। রিতেনবাবু বলেন, এন এম গুপ্ত ট্রফিতে যদি আরও নামী দল আনা হয়, তাহলে এই টুর্নামেন্ট আরো বেশি এগোবে। গ্যাপ না দিয়ে নিয়মিত এই টুর্নামেন্ট চালিয়ে যেতে আয়োজকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
সভায় প্রতিযোগিতার প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ডিএসএ-র সচিব অতনু ভট্টাচার্য বলেন, তার জন্মের আগে থেকে চলে আসা এই টুর্নামেন্ট এবারে নিজে আহ্বায়ক হিসেবে চালিয়ে যেতে পারায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে খুশি। যেমনটা প্রত্যাশা করেছিলেন, তার অনেক উর্ধ্বে পেয়েছেন। উদাহরণ প্রসঙ্গে বলেন, কুড়ি টাকা টিকিট থেকে প্রায় ৩লক্ষ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেটা অনেক বড় প্রাপ্তি। অতনুবাবু বলেন, এবারের প্রতিযোগিতা এক উৎসবের মেজাজে আয়োজন হয়েছে। সবাই নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে সহায়তা করেছেন। তিনিও চান এন এম গুপ্ত ট্রফি ফুটবল টুর্নামেন্ট উৎসবের আমেজ নিয়ে নিয়মিত হোক।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাবুল হোড় বলেন, এনএম গুপ্ত ট্রফি ফুটবল টুর্নামেন্টের সুচনা থেকে এ পর্যন্ত কোন না কোনভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, এনএম গুপ্ত ট্রফি ফুটবলকে নিয়ে প্রত্যাশা অনেক। অসম তথা উত্তর পূর্ব ভারতের বাইরেও এর নাম রয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৬২ সালে শুরু হয় বরাকের ফুটবল কিংবদন্তি এন এম গুপ্তের নামে ফুটবল টুর্নামেন্ট। শুরুতে এই প্রতিযোগিতায় রেফারি খগেশচন্দ্র সেনের নামে রানার্স আপ ট্রফি এবং মতিলাল গুলগুলিয়ার নামে ফেয়ার প্লে ট্রফি দেওয়া হতো। বাবুলবাবু বলেন, বরাকের মানুষ ফুটবল পাগল।
১৯৪৮ সালে বি রায় চৌধুরী ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন গড়ে উঠে শিলচর ইন্ডিয়া ক্লাবে। অসমে তখনো কোন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ছিল না। তাই এখানকার ফুটবল দর্শকদের কথা মাথায় রেখে এই খেলা প্রতিবছর আয়োজন করা হোক। বক্তব্যের পরিসরে তিনি এও বলেন, সব সময়েই লাভের চিন্তা করা উচিত নয়। ডিএসএ-র উদ্দেশ্য যেহেতু খেলাকে প্রমোট করা অতএব জনপ্রিয়তার খাতিরে এন এম গুপ্ত ট্রফি ফুটবলকে তাদের প্রমোট করতে হবে। তাতে ‘লস’ হলেও হলেও কিছু যায় আসে না। তবে তিনি এও বলেন, বড় আয়োজনে আয়োজকদের অনেক ঝক্কি নিতে। শিলচরে বাইরের টিম আনা এক বিরাট ব্যাপার। বরাকের যোগাযোগ ব্যবস্থা অপ্রতুলতার জন্যই দল আনা এখানে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
সভাপতির ভাষণে শিবব্রত দত্ত বলেন, নলিনী মোহন গুপ্ত মোহন বাগানে খেলার সুযোগ পেলেও চাকরিসূত্রে শিলচরে আসেন। এখানে এসে ফুটবলকে আরো জনপ্রিয় করে তুলেন। ইন্ডিয়া ক্লাবকে আইএফএ শিল্ডে-র মতো নামি প্রতিযোগিতায় বহুবার বাইরে নিয়ে খেলিয়েছেন। প্রতিবার দলকে নেতৃত্ব দিতেন বলেন। দলের ভেতরে ও বাইরে অপরিসীম নেতৃত্ব প্রদানের জন্যই তাঁর নামের আগে “ক্যাপ্টেন” যুক্ত হয়। সভাপতি শিবব্রত দত্ত বলেন, অত্যুধিক বর্ষণের জন্য এবারের মাঠকে এনএম গুপ্ত ট্রফি ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য উপযোগী করতে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে। টুর্নামেন্টের মোট ৭টি ম্যাচে প্রায় ৪০ হাজার দর্শক খেলা উপভোগ করেছেন, যা ডিএসএ-র জন্য বিরাট এক প্রাপ্তি। এবারে এনএম গুপ্ত ট্রফি ডিএসএ-র এখন বার্ষিক উৎসবের মতো হয়েছে।আগামীতে আরও ভাল দল নিয়ে সেটা আয়োজনের পক্ষপাতী তিনি।
সভায় প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন ডিএসএ-র ফিজিক্যাল শাখার প্রাক্তন সচিব উৎপল দত্ত, ক্রীড়া সাংবাদিক ও রেফারি ইকবাল বাহার লস্কর, সায়ন বিশ্বাস প্রমুখ। সবাই এই খেলা নিয়মিত আয়োজনের পক্ষে সায় দেন। সব শেষে ক্রীড়া ম্যাগাজিন খেলার সময় ক্যাপ্টেন এন এম গুপ্ত ট্রফি ফুটবল প্রতিযোগিতার বিশেষ সংখ্যা উন্মোচন করেন বিশিষ্ট চিত্র সাংবাদিক সুদীপ সিং, পার্থ শীল সহ উপস্থিত অতিথিরা। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিকাশ দাস, অজয় চক্রবর্তী প্রমুখ। প্রসঙ্গত, ৩৩তম এবারের এন এম গুপ্ত ট্রফি ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে নিজস্ব উদ্যোগে ম্যাগাজিন ছাপা করাতে ডিএসএ-র সভাপতি, সচিব, সাবেক সভাপতি সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রশংসা কুড়ান সম্পাদক তাজ উদ্দিন।