করিমগঞ্জ নাম বহাল রাখার দাবিতে স্বাক্ষর অভিযানের সূচনা
মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ১২ মার্চ : করিমগঞ্জ নাম বহাল রাখার দাবিতে স্বাক্ষর অভিযান শুরু করল নাম পরিবর্তন প্রতিরোধ নাগরিক কমিটি। বুধবার শ্রীভূমির গঙ্গা ভাণ্ডার প্রাঙ্গণে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কার্যসূচি উদ্বোধন করেন হাইলাকান্দি থেকে আগত সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক শিখা ভট্টাচার্য। তিনি স্মারক পত্রে স্বাক্ষর করে তারপর তাঁর বক্তব্যে বলেন যে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে জেলার পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও জনগণের জীবন ধারণের মান উন্নয়নের কোন পরিবর্তন হবে না। বর্তমান সরকারের আমলে বরাক উপত্যকার জনগণ যে সীমাহীন বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে দুর্বল করতে সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধি নিয়ে এই নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সকল অংশের জনগণকে এগিয়ে এসে এই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপ্রসূত নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র গণ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান।
কমিটির আহ্বায়ক রজত চক্রবর্তী বলেন যে সম্প্রতি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ করার ক্ষেত্রে করিমগঞ্জ জেলার স্বল্প সংখ্যক প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এখানেও চরম অবহেলা ও বৈষম্য। দীর্ঘদিন থেকে বদরপুর ও করিমগঞ্জে উড়ালপুলের দাবি বারে বারে উত্থাপন করা সত্ত্বেও এই ন্যায্য দাবি উপেক্ষিত । অথচ এমন চরম অবহেলা থাকা সত্ত্বেও বরাক উপত্যকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নিশ্চূপ। এমতাবস্থায় জনগণকে হিন্দু মুসলমানের নামে বিভক্ত করার নিকৃষ্ট চক্রান্ত ও করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ তীব্র গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
অন্যতম আহ্বায়ক অরুণাংশু ভট্টাচার্য বলেন যে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকার কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেনি। সমস্ত ধরণের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংগে আলাপ আলোচনার কোনো প্রয়োজন অনুভব করেনি। জনগণের মতামতকে তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ একপক্ষীয় ভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে হিন্দু ও মুসলমান জনগণের ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এধরণের আক্রমণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এন আর সি নবায়ন থেকে শুরু করে বরাক উপত্যকার দুটো বিধানসভা কেন্দ্র কমিয়ে ব্রক্ষ্মপুত্র উপত্যকার দুটো বিধানসভা কেন্দ্র বৃদ্ধি করা, উন্নয়নের ক্ষেত্রে চরম অবহেলা ও উদাসীনতা এগুলো একটার পর একটা আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর যদি সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধি নিয়ে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার না হই তাহলে মানুষ হিসেবে আমরা পরিচয় দিতে পারব না। তাই নাম পরিবর্তন বিরোধী আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে।
তাছাড়া করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন বিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে সবধরণের সাহায্য ও সহযোগিতা করার জন্য জনগণকে আবেদন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন আহ্বায়ক সুনীত রঞ্জন দত্ত, বদরুল হক চৌধুরী ও কার্যকরী সদস্য টিংকু গুপ্ত। বক্তারা আরো বলেন যে এই আন্দোলন সংগঠিত এবং দীর্ঘস্থায়ী করতে হবে এবং এর জন্য জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে। তারা বলেন মনুষ্যত্ব নিয়ে বাঁচতে হলে আন্দোলনকে তীব্র থেকে আরও তীব্রতর করে গড়ে তুলতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সমস্ত স্তরের জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান তারা।
আজকের স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানের প্রথম দিনেই যথেষ্ট সংখ্যক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সচেতন ব্যক্তি স্বাক্ষর দিয়ে সমর্থন ব্যক্ত করেন।
এ দিনের অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কমিটির কার্যকরী সদস্য পিকলু দাস। এই অনুষ্ঠানে অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মনোজ দেব, পৃথ্বীজিৎ দেব, নির্মল কুমার সরকার, পরিমল চক্রবর্তী, দেবব্রত শুক্ল, অজয় চৌধুরী, সুদীপ্তা দে চৌধুরী, তাপস পুরকায়স্থ, প্রদ্যুৎ দাস, নুরুল হক, আব্দুল করিম, আব্দুর রহিম, বিনয় হালাম, তুতিবুর রহমান, তুষার পুরকায়স্থ, ভবতোষ চক্রবর্তী, আব্দুল সাত্তার, চন্দন পুরকায়স্থ, প্রজ্বল দেব, প্রবীর চন্দ্র নাথ, বাবুল রায়, হিল্লোল ভট্টাচার্য, প্রীতিলাল দাস সহ অন্যান্যরা