শিলচরে ফ্লাইওভার বাস্তবায়নে তিন শক্তির সম্মিলিত প্রয়াস আবশ্যক

বরাক তরঙ্গ, ৮ ডিসেম্বর, সোমবার,
শিলচরের রাস্তাঘাটে প্রতিদিনই বাড়ছে যানজটের দাপট। শহরের স্বাভাবিক রূপরেখা আজ প্রায় স্তব্ধ হয়ে পড়ে যানবাহনের চাপে। এমন অবস্থায় ফ্লাইওভার বা এলিভেটেড ওয়ে—এ দু’টি পরিকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মতভেদ খুবই কম। বহু বছরের দাবি, বহু বছরের স্বপ্ন। সেই দাবি পূরণে মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ইতিবাচক ঘোষণা যেন আশার আলো দেখিয়েছিল। শুধু ঘোষণাই নয়, বরাদ্দের অর্থ থেকে শুরু করে প্রাথমিক মাপজোখ—সবই এগিয়েছিল নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী। মাপজোখের রেখা যখন বৈধ–অবৈধ সম্পত্তিতে স্পর্শ করতে শুরু করল, তখনই ব্যবসায়ী মহলের একাংশ আপত্তির সুর তুললেন। প্রশাসনকেও ডাকতে হল নাগরিক সভা। সেখানে ফ্লাইওভার সমর্থনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মত পাওয়ায় মানুষের মনে ফের জেগেছিল আশার সঞ্চার।

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বরাক সফর সেই আশায় খানিকটা প্রশ্নচিহ্ন টেনে দিল। প্রথম দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি জানালেন—জনগণ না চাইলে ফ্লাইওভারের কাজ হবে না। আর দ্বিতীয় দিন বললেন—সব পক্ষের মতামত নিয়ে জেলা কমিশনার প্রতিবেদন পাঠালে জানুয়ারিতেই কাজ শুরু করা যেতে পারে। এই দ্বৈত বার্তাই সাধারণ মানুষের মনে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ ডেকে এনেছে।

ফ্লাইওভারের বহুল প্রতীক্ষিত প্রকল্প বাস্তবায়নে দু’টি পথে এগোনো জরুরি—প্রথমত, গণতান্ত্রিক উপায়ে মানুষের ঐকমত্যে প্রতিফলিত দাবিকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়া। যাঁরা মাঠে নেমেছেন, তাঁদের পাশে শহরবাসীর আরও বড় সংখ্যায় দাঁড়ানো প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় মন্ত্রী কৌশিক রায়কে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে সুস্পষ্টভাবে দাবি জানানোর উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ তিনিই এ অঞ্চলের উন্নয়ন প্রকল্পগুলির সেতুবন্ধন।

বরাকের উন্নয়ন ইতিহাস বলে—সাধারণ মানুষের রাস্তায় নেমে দাবি, বুদ্ধিজীবীদের আলোচনার মঞ্চ আর জনপ্রতিনিধিদের রাজনৈতিক তৎপরতা—এই তিন শক্তির সম্মিলিত প্রয়াসেই বড় প্রকল্পের বাস্তব রূপ দেখা যায়। শিলচরের ফ্লাইওভারও তার ব্যতিক্রম হবে কেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *