এআইডিএসও’র ধোয়ারবন্দ  আঞ্চলিকের পঞ্চম সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বরাক তরঙ্গ, ২৪ আগস্ট : ধোয়ারবন্দের রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে অনুষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক সম্মেলনের শুরুতে সংগঠনের সভাপতি গৌরিশ দেব পতাকা উত্তোলন করেন। পতাকা উত্তোলনের পর অস্থায়ীভাবে স্থাপিত শহিদ বেদীতে ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আঞ্চলিক সম্মেলনের মুখ্য বক্তা এআইডিএসও’র রাজ্য কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি হিল্লোল ভট্টাচার্য, সংগঠনের জেলা সভাপতি স্বাগতা ভট্টাচার্য, জেলা সম্পাদক গৌরচন্দ্র দাস, জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য আপন লাল দাস, আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক রীতা বাগতি সহ উপস্থিত ছাত্র ছাত্রী প্রতিনিধিরা।

এআইডিএসও'র ধোয়ারবন্দ  আঞ্চলিকের পঞ্চম সম্মেলন অনুষ্ঠিত

গৌরিশ দেবের সভাপতিত্বে পরিচালিত প্রকাশ্য অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন হিল্লোল ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, পরাধীন ভারতে ছাত্ররা স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল এই স্বপ্ন নিয়ে যে স্বাধীন ভারতে দেশের শিক্ষা হবে সম্পূর্ণ অবৈতনিক। শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে ছাত্রদের চরিত্র গঠন ও মনুষ্যত্ব অর্জন। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই সরকার শিক্ষাকে বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষাকে সংকোচিত করার পরিকল্পনা রচনা করে। তিনি এও বলেন দেশের শিক্ষানুরাগী জনসাধারণ ও ছাত্রছাত্রীদের মুখ্য দাবি ছিল শিক্ষাখাতে কেন্দ্রীয় বাজেটের ১০ শতাংশ ও রাজ্য বাজেটের ৩০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। কিন্তু দেশের প্রতিটি সরকারই শিক্ষা বাজেট ক্রমাগত হ্রাস করেছে।  ১৯৮৬ সালে তদানীন্তন কেন্দ্র সরকার নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। সেই শিক্ষানীতি শিক্ষাকে পরিষেবা প্রদানকারী খণ্ডের পরিবর্তে একটি মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে পরিণত করে। সেই পথ আরও প্রশস্ত করতে শিক্ষা অধিকার আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাস ফেল প্রথা চালু করা হয়। পাশ ফেল তুলে দেওয়ার ফলে যখন সরকারি স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষার মান নিম্নগামী হতে শুরু করে তখন পাস ফেল প্রথা পুনরায় চালুর পরিবর্তে কেন্দ্র সরকার করোনা কালে ২০২০ সালে নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা কম থাকার অজুহাত খাঁড়া করে একের পর এক সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে রক্ষা করা এবং জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০ বাতিলের দাবিতে তীব্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। আঞ্চলিক সম্মেলনের প্রতিনিধি সভায় সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন রীতা বাগতি। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পাঠের পর সংশোধনী সহ তা গৃহীত হয়।

এআইডিএসও'র ধোয়ারবন্দ  আঞ্চলিকের পঞ্চম সম্মেলন অনুষ্ঠিত

এছাড়াও প্রতিনিধি সম্মেলনে ছাত্রী সহ সর্বস্তরের মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, বৃহত্তর ধোয়ারবন্দ অঞ্চলের বেহাল সড়কের পূর্ণ সংস্কার করা, ধোয়ারবন্দ অঞ্চলের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামো উন্নতি করা, বৃহত্তর ধোয়ারবন্দ অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে এই অঞ্চলে একটি সরকারি কলেজ স্থাপন করা, ধোয়ারবন্দ শিলচরের মধ্যে সরকারি বাস চালু করে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ৫০ শতাংশ বাস ভাড়ায় ছাড় দেওয়া এবং এই অঞ্চলের অতীব জরুরি এবং বৃহত্তর অঞ্চলের মানুষের সুবিধার্থে সরকারি প্রতিশ্রুতি মতো ধোয়ারবন্দে সরকারি হাসপাতাল তৈরি করা ইত্যাদি দাবি সনদ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। বৃহত্তর ধোয়ারবন্দ অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা সমাধানের এবং দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবতা রক্ষার দাবিতে আগামীতে দূর্বার ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে আঞ্চলিক সম্মেলনে মৌসমী রায়কে সভাপতি ও নীরজ কালোয়ারকে সম্পাদক মনোনীত করে ১৮ সদস্যের ধোয়ারবন্দ আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য রাখেন স্বাগতা ভট্টাচার্য ও গৌর চন্দ্র দাস। সম্মেলনে আর জি কর মেডিকেল কলেজ এবং আসামের ধিং সহ বিভিন্ন রাজ্যে ছাত্রী ও মহিলাদের উপর যে ভয়াবহ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে তার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানানো হয় এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জোরালো দাবি উত্থাপন করা হয়।

Author

Spread the News