১২৫ তম জন্মদিনে বরদা কান্ত দাসকে স্মরণ শিলচরে
বরাক তরঙ্গ, ২৪ আগস্ট : বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন কছাড় জেলা সমিতির ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় বঙ্গভবনে আলোর দিশারী বরদা কান্ত দাসের ১২৫ তম জন্মদিবস এক গুরুগম্ভীর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা সমিতির সভাপতি সঞ্জীব দেবলস্কর। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সুমিত্রা দত্ত ও বরদা কান্ত দাসের সুযোগ্য পুত্র কানাই লাল দাস।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রবাদ প্রতীম পুরুষ বরদা কান্ত দাসের আলোকচিত্র উন্মোচন করেন সভাপতি সঞ্জীব দেবলস্কর ও মুখ্য বক্তা সুমিত্রা দত্ত । সম্মিলিত লোকমঞ্চ শিলচর সহ উপস্থিত শিল্পীদের সম্মিলিত কন্ঠে পরিবেশিত হয় “আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে”। সভাপতি তার প্রারম্ভিক বক্তব্যে স্মরণ সভার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, বরদা কান্ত দাস ছিলেন একাধারে জনদরদী, স্বাধীনচেতা লব্ধপ্রতিষ্ঠ ব্যবসায়ী, সংস্কৃতিপ্রেমী ও পৃষ্টপোষক। তারই ব্যাক্তিগত উদ্যোগে ১৯২৯ সনে শহর শিলচরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় “শিলচর বিদ্যুত সরবরাহ প্রতিষ্ঠান”। এখানে উল্লেখ্য যে এই প্রতিষ্ঠান আসামে দ্বিতীয় ও সিলেট থেকেও ছয় বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সঞ্জীববাবু আরও বলেন, বরদা কান্ত দাসের ব্যাক্তিগত প্রচেষ্টাতেই বৈষ্ণব ভাবধারা পুষ্ট অনবদ্য মণিপুরী নৃত্য বিশ্বজনের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত ও সমাদৃত হয় এবং ভারতীয় মার্গনৃত্যের শাখা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। ফল স্বরূপ সেনারিক রাজকুমার, ব্রজবাসী সিংহ, বিহারী সিংহ, গুরু বিপিন সিংহ, সুধীর সিংহ, আদিত্য সিংহ সহ আরও অনেকেই ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে নৃত্যশিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন। একসময়ে তারই আমন্ত্রণে বিশ্ববরেণ্য বহু শিল্পী শিলচর এসে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। এখানে উদয়শঙ্কর, রবিশঙ্কর, অমলা শঙ্কর, জোহরা সাইগল, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, বাহাদুর খাঁ, সিমকী (ফরাসী শিল্পী), ভি বালসারা, রাশিয়ান নৃত্য শিল্পী নীনা মায়া, অতীনলাল, গুরু গোলাপ পিল্লাই, সলিল চৌধুরী, রাজা বোস, যাদুকর পিসি সরকার, পূর্ণদাস বাউল, নির্মলেন্দু চৌধুরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য । বরদা কান্ত দাস শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয়ের প্রথম সভাপতি ছিলেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিনের সভার মুখ্য বক্তা সুমিত্রা দত্ত তাঁর তথ্য পূর্ণ বক্তব্যে বরদা কান্ত দাসের কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সভায় বক্তব্য রাখেন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন কাছাড় জেলা সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তৈমূর রাজা চৌধুরী, দীপঙ্কর ঘোষ, অংশুমান রায়, নন্দিনী চক্রবর্তী, অনুপ রায়, মৌসুমী সাহা, গৌতমপ্রসাদ দত্ত, স্বপন দেবরায়, মজ্ঞুরী ভট্টাচার্য, বাঁশিবাদক কানাই দাস, বন্দনা দাস ও পুত্র কানাইলাল দাস।
এদিন তৈমূর রাজা চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে সভায় কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। তিনি পানপট্টির বর্তমান এপিডিএল অফিসটিতে প্রস্তাবিত নতুন ভবনের নাম বরদা কান্ত দাসের নামে নামাঙ্কিত করার আবেদন রাখেন। ইতিমধ্যেই সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ জেলা আয়ুক্তের কাছে এক দাবিসনদে গোলদিঘী মল থেকে গোলাপগঞ্জ সংযোগকারী রাস্তা বরদা কান্ত দাসের নামে নামাঙ্কিত করার আবেদন জানান। সভায় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দাবির সমর্থনে দাবিসনদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এখানে উল্লেখ্য অনুষ্ঠান শেষে সম্মিলিত লোকমঞ্চ শিলচর জেলা উপায়ূক্তের কাছে ইতিমধ্যেই তাদের দাবিসনদ উপস্থাপন করেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে সঙ্গীত পরিবেশন করেন রুদ্রানী দাস। সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সুপ্রদীপ দত্তরায়।