বরাক তরঙ্গ, ২৪ নভেম্বর : রাজ্য সরকারের নতুন নোটিফিকেশনের জেরে চাকরি হারিয়ে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন তিন কমিউনিটি হেলথ গাইড। ছাঁটাইয়ের নোটিশ হাতে নিয়ে সোমবার সকালেই মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের সামনে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। অসহায় তিন মহিলা কর্মীর আকুতি দরদী মুখ্যমন্ত্রী, আমাদের বাঁচান এই বয়সে কোথায় যাবো? দীর্ঘ বছর ধরে তারা স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনে কমিউনিটি হেলথ গাইড হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। গ্রামে-গঞ্জে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি, গর্ভবতী মা, শিশু ও প্রবীণদের নানান চিকিৎসা-সহায়তা, সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্প পৌঁছে দেওয়া—সবকিছুই তারা নিষ্ঠার সঙ্গে করে এসেছেন। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্য সরকার একটি নতুন নোটিফিকেশন জারি করে জানায়, ৬০ বছর উত্তীর্ণ কমিউনিটি হেলথ গাইডদের ১ নভেম্বর থেকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হবে। সেই তালিকায় তাদের নাম ওঠায় হঠাৎ করেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তিনজন।তাদের কথায় আমরা সারা জীবন সরকারি কাজে ছুটেছি। এখন নিজের চিকিৎসা করার মতোও টাকা নেই। বাঁচতে হলে ওষুধ লাগে কিন্তু সেই ওষুধ কেনার টাকাই কোথায় পাবো?তারা জানান, সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তাদের কাঁধে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, বাড়ির খরচ, ওষুধপত্র—সবই তাদের উপার্জনের ওপর নির্ভর করত। এখন চাকরি হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন।মহিলা কর্মীদের আর্তনাদ বয়স হলো তাই ফেলে দিল—এটা কি ন্যায়? মৃত্যুই এখন আমাদের একমাত্র পথ হয়ে গেল।
সোমবার সকাল থেকেই তারা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছিলেন, দেখা পাওয়ার আশায়। চোখ ভিজে গিয়েছিল, বুকে জমেছিল জীবনের সব হতাশা। আশেপাশের মানুষও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন দৃশ্য দেখে۔যদিও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের কথা বলা সম্ভব হয়নি, তবে কিছুসময় পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছান পূর্ব আগরতলা থানার ওসি সুব্রত দেবনাথ। তিনি তিন মহিলাকে শান্ত করেন এবং আশ্বস্ত করেন বিষয়টি সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে। আপনাদের সমস্যাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। এই ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে পরিশ্রম করে যাওয়া প্রবীণ কর্মীদের হঠাৎ ছাঁটাই কি ন্যায্য? তাদের জীবনের শেষ বয়সে আর্থিক নিরাপত্তা কি সরকারের দায়িত্ব নয়? তিন কমিউনিটি হেলথ গাইডের অশ্রুভেজা আবেদন আজ আগরতলার বুকে তুলে দিল এক গভীর বাস্তবতার ছবি জীবনের শেষ অধ্যায়ে স্বার্থহীনভাবে কাজ করা এই নারীরা এখন স্রেফ একটি সুযোগ, একটি আশ্রয়, একটি মানবিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।


