আলোয় সেজে ওঠেছে ধর্মনগর শহর
বরাক তরঙ্গ, ১১ নভেম্বর : ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর জেলা শহরের বিগ বাজেটের কালী পূজার প্রস্তুতি অন্তিম লগ্নে। রাত পোহালেই গোটা রাজ্য মেতে উঠবে আলোর উৎসব দীপাবলিতে। রাজ্যের সবক’টি বড় বাজেটের পুজো ও বারোয়ারী পুজো কমিটির কর্মকর্তারা সেরার থেকে সেরা থিম দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরতে দিন-রাত এক করে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে।
সর্বজনীন পূজা কমিটি ও ক্লাব কর্তৃপক্ষরা কোনো খামতি রাখছেননা। অধিকাংশ প্যান্ডেল গুলিতেই নদীয়া নবদ্বীপের শিল্পীরা দুর্গো পুজোর আগে থেকেই প্যান্ডেল তৈরি করে আসছেন। তবে কালীপুজো মানেই উত্তরের ধর্মনগর শহরের পুজো। গোটা রাজ্যের মধ্যে ধর্মনগর শহরে বড় বাজেটের কালী পুজো হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। ধর্মনগরের কালী পুজো চিরাচরিতভাবে ধুমধামের মাধ্য দিয়ে হয়ে থাকে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ও বহিঃ রাজ্য অসমের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত প্রাণ দর্শনার্থীরা কালীপুজো দেখতে ধর্মনগর শহরে ছুটে আসেন। প্রতিটি মণ্ডপে মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড় কালীপুজোর দিন থেকে শুরু করে চলে চার পাঁচ দিন পর্যন্ত। গোটা ধর্মনগর শহর বিভিন্ন রকমারি লাইটের আলোয় আলোকিত হয়ে পড়ে। অন্যান্য বছর ধর্মনগর এলাকায় ছোট-বড় প্রায় শতাধিক কালী পূজো হয়ে থাকলেও এবছর পরিমাণে পুজো কিছুটা কম।
তবে ধর্মনগর শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আট থেকে দশটি বিগ বাজেটের পূজো রয়েছে।সেই ক্লাব গুলি হল আমরা সবাই ক্লাব, অ্যাথলেটিক ক্লাব, অ্যারিয়েন্স ক্লাব, ওয়াইএমসি, বয়েজ ক্লাব, নবরুপ সঙ্গ, নেতাজি ক্লাব, রেলওয়ে ইয়ংম্যান, অ্যাথলেটিক ক্লাব ইত্যাদি।এবারে আমরা সবাই ক্লাবের ৩১ তম বছরের পুজো। ক্লাব কর্তৃপক্ষরা জানান, এবারে তাদের পূজোর বাজেট ১৭ লক্ষ টাকা। পুজোর থিম গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান। স্থানীয় শিল্পীদের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে গোটা প্যান্ডেল। শহরের ঠিক মাঝখানে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ওয়াই এম সি। এবারের তাদের ৪১ তম নিবেদন।তাদের পূজোর বাজেট ১৭ লক্ষ টাকা।তারা ভার্টিকাল সিটির আদলে তাদের পূজো প্যান্ডেল তৈরি করছেন।শহরের উত্তর প্রান্তে রয়েছে বিশেষ ঐতিহ্যবাহী ক্লাব অ্যারিয়্যান্স ক্লাব। প্রতিবছর ক্লাব কর্তৃপক্ষরা দর্শনার্থীদের জন্য কিছু নতুনত্বের চেষ্টা চালিয়ে যান।
এবার তাদের পুজোর মূল আকর্ষণ মালয়েশিয়ার টুইন টাওয়ার। তাদের বাজেট ৩০ লক্ষ টাকা। দীননাথ নারায়নী বিদ্যামন্দিরের মাঠে আরেকটি ঐতিহ্যবাহী পূজো হচ্ছে অ্যাটলেটি ক্লাবের পূজো। এবারে তাদের ৬২ তম বছরের পূজো। তাদের পুজোর মূল আকর্ষণ হচ্ছে বাঁশের ঘরে মা। বাজেট রয়েছে ১৫ লক্ষ টাকা।ধর্মনগর রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে রেলওয়ে ইয়ংম্যান অ্যাথলেটি ক্লাব। তাদের পুজোর থিম মাটির ঘরে মা। তাছাড়া রাজবাড়িতে অপর ঐতিহ্যবাহী ক্লাব নবযুগ সংঘ এবং আলগাপুরের নেতাজি ক্লাব তাদের শৈল্পিক নিদর্শনের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের টানতে প্রতিবার সমর্থ হয়। পাশাপাশি কামেশ্বরের দেশবন্ধু ক্লাব শহরের ক্লাবগুলোর থেকে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। সঙ্গে ধর্মনগরের অন্যতম বনেদি ক্লাব হলো বয়েজ ক্লাব।
বয়েজ ক্লাবের এবারের পূজোর থিম গণতন্তের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যম। এই থিমের উপর ভিত্তি করেই তাদের পূজো প্যান্ডেল তৈরি হয়েছে। এবছর তাদের ৩৮ তম বছরের পূজো। তাদের বাজেট ১৮ লক্ষ টাকা। এক কথায় সবকটি বড় বাজেটের পুজো উদ্যোক্তাদের যেন এক অঘোষিত প্রতিযোগিতা। তাই ধর্মনগর শহরের প্রাণকেন্দ্রে কালীপুজো মানে অনেকটাই ভিন্ন মাত্রার আনন্দ, ভিন্নমাত্রার ঐক্যের মিলন বন্ধন।