বরাক তরঙ্গ, ২৩ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
মঙ্গলবার শিলচর জেলা কমিশনার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিডিএফ এর এক প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লিখিত একটি স্মারকলিপি জেলাশাসকের/ প্রতিনিধির হাতে তুলে দেন। এছাড়া বিডিএফের তরফে এই স্মারক লিপি এবং প্রতিলিপি মেইলযোগে প্রধান মন্ত্রী সহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রী তথা অসমের মুখ্যমন্ত্রীকেও পাঠানো হয়।
পরে জেলা কমিশনার কার্যালয় প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, তাঁরা এই স্মারকলিপির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রায় দু’কোটি হিন্দু সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অবিলম্বে মুখ খোলার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া তাঁরা ভারত সরকারের তরফে রাস্ট্রসংঘ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থার উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি তথা সক্রিয় আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি করে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেবারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রদীপ দত্তরায় বলেন, দেশভাগে সাধারণ নাগরিকদের কোন ভূমিকা ছিলনা অথচ সমস্ত বিড়ম্বনা ভোগ করতে হয়েছে তাঁদেরই, বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের। তাই বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি ভারতের জাতীয় প্রতিশ্রুতির কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে। তিনি বলেন এই বিষয়ে সরকারের নীরব ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ ইউনিস সরকার বাংলাদেশের দায়িত্ব নেবার পর থেকে এখন অবধি দু’হাজারের উপর সংখ্যালঘু, বিশেষতঃ হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। চিন্ময় প্রভুর মতো ধর্মীয় নেতাকে গত ছ’মাস ধরে বিনাদোষে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে একাংশ জনগনের মধ্যে সন্দেহ উদ্রেক হচ্ছে যে হয় হিন্দু নির্যাতনের ইস্যুতে কাজে লাগিয়ে বিজেপি সরকার এদেশে ভোটব্যাঙ্ক সুরক্ষিত করার জন্যই এই ব্যাপারে নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে অথবা বাঙালি হিন্দুদের প্রতি এই সরকারের কোন সহানুভূতি নেই। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জারি থাকলে গত একবছরে তার ফলাফল পরিলক্ষিত হবার কথা ছিল, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। তিনি বলেন, কূটনৈতিক স্বার্থ দুই কোটি অসহায় সংখ্যালঘুদের জানমালের চেয়ে বড় হতে পারে না। তাই কেন্দ্রীয় সরকার যদি এই সমস্যা সমাধানে প্রকৃতই আন্তরিক হন তবে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীকে এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হবে। কবে সেদেশে নির্বাচন হয়ে স্থিতিশীল সরকার হবে বা আদৌ হবে কিনা এসবের জন্য অপেক্ষা করলে আরো অনেক নিরীহ সংখ্যালঘু আক্রান্ত হতে পারেন।
তিনি এও বলেন, কূটনৈতিক বা অন্যক্ষেত্রে সাফল্য না পেলে প্রয়োজনে নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া হোক অথবা সীমান্তে শরনার্থী শিবির স্থাপন করে সংখ্যালঘুদের আশ্রয়ের ব্যাবস্থা করা হোক। অন্যথা মিথ্যা হিন্দু দরদ দেখিয়ে এবং বয়ানবাজী করে কোন লাভ নেই।
বিডিএফ আহ্বায়ক আইনুল হক মজুমদার এদিন বলেন যে বিগত কয়েকদিনে বাংলাদেশের উগ্র মৌলবাদীরা যেভাবে ধর্মীয় মৌলবাদ ও ভারত বিরোধিতার নামে সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে তা ভয়াবহ। দেশের স্বাধীনতার প্রতীক ও ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন স্মারক ও প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার চেষ্টা নেওয়া হয়েছে। দেশের নামী সংবাত্র কার্যালয়েও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ইসলাম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় নিরীহ পোষাক শিল্প শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে,টেনে, পিটিয়ে,প্রকাশ্যে হাজার লোকের সামনে জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ করে মারা হয়েছে। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ তথা সেদেশের জাতীয় কবি নজরুলকে অপমান করা হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার কারিগর শেখ মুজিবুর তথা মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত স্মৃতি স্মারককে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় জিগির তুলে নিগৃহীত করা হচ্ছে নিরীহ বাউল, লোকশিল্পী,তথা সাংস্কৃতিক কর্মীদেরকে। তিনি বলেন মহম্মদ ইউনিসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী কালীন সরকার হয় এই উন্মত্ততাকে প্রতিহত করতে ব্যর্থ অথবা ব্যাক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থে এসবের বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। সব মিলিয়ে বর্তমানে গভীর আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সহ সমস্ত মুক্তমনা নাগরিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ঐতিহাসিক,ভাষাগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক একাত্মতার জন্য আমাদের দীর্ঘদিনের যোগাযোগ রয়েছে। এই উপত্যকায় এমন অনেক রয়েছেন যাদের নিকটাত্মীয়রা ওপারে রয়েছেন।
আইনুল হক মজুমদার বলেন যে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ রাস্ট্র এবং এই উপমহাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ইতিপূর্বে আমাদের দেশ দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে নয়, তারা খোদ প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার স্বার্থে বক্তব্য পেশ করা তথা তার তরফে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করার দাবি জানাচ্ছেন।


