পৃথক বরাকের নামে বিভাজনের খেলা বিজেপির : সুপ্রকাশ তালুকদার
বরাক তরঙ্গ, ২ অক্টোবর : দিল্লির মসনদ দখল করতে বিজেপি দেশজুড়ে শুরু করেছে বিভাজনের খেলা। একই ভাবে পৃথক বরাকের ইস্যু দিয়ে এই উপত্যকায় চলছে বিভাজনের খেলা। সোমবার শিলচরে সিপিএম কাছাড় জেলা কমিটি আহুত এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই অভিমত ব্যক্ত করেন দলের রাজ্য কমিটির সম্পাদক সুপ্রকাশ তালুকদার।
নরসিংটোলার মাঠে দলের জেলা কমিটির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সমীরণ আচার্যের পৌরহিত্যে সভায় তিনি বলেন, বিজেপি শাসনে আমজনতার নাভিশ্বাস উঠেছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি থেকে ধরে বিভিন্ন কারণে আমজনতার পক্ষে বেঁচে থাকাটাই হয়ে উঠেছে মুশকিল। তাই আমজনতা বর্তমানে প্রচণ্ডভাবে ক্ষিপ্ত। মাঠে-ময়দানে সাধারণ লোকেদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায় তাদের ক্ষোভের মাত্রা। ক্ষোভের সবচেয়ে বড় কারণ মূল্য বৃদ্ধি। বিজেপি নেতৃত্বও এ নিয়ে অবহিত খুব ভালোভাবে। আমজনতার এইপ্রত্যাহ্বানের মুখে পড়ে বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, নির্বাচন হলে তাদের হার নিশ্চিত। তাই এবার, তারা এবার শুরু করেছেন বিভাজন সৃষ্টি থেকে ধরে আন্যান্য ন্যাক্কারজনক খেলা। বিজেপির চিরাচরিত হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের খেলা তো রয়েছেই এর সঙ্গে আবার বর্তমানে এরাজ্যে শুরু হয়েছে বরাক-ব্রহ্মপুত্র, বাঙালি-অসমিয়া বিভাজনের অপপ্রয়াসও।
তাঁর কথায়, ইদানিংকালে তো পৃথক বরাকের কোনও কথাই শোনা যাচ্ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা শিলচরে এসে এই প্রসঙ্গটা জাগিয়ে তোলেন। এরপর আবার দেখা যায় বরাক উপত্যকা থেকে প্রদীপ দত্ত রায় নামে একজন লোক কলকাতায় গিয়ে এনিয়ে দাবি উত্থাপন করছেন। দুটো ঘটনার মধ্যে কি কোনও যোগসূত্র রয়েছে, এই প্রশ্ন উত্থাপন করে তালুকদার বলেন, বড়োল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে বড়ো এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন হয়েছে। একইভাবে পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে কার্বি আংলং-এও। কিন্তু বিজেপি সরকার সেসব দাবি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। আর যে বরাক উপত্যকায়, পৃথকীকরণের জন্য কোনও আন্দোলনই নেই, সেখানে কিনা হঠাৎ করে উত্থাপন করা হচ্ছে এই প্রসঙ্গ। এথেকেই তো স্পষ্ট হয়ে যায়, আসলে এর পেছনে রয়েছে বিভাজন সৃষ্টির খেলা। প্রায় আধ ঘন্টার বক্তব্যে তিনি বলেন বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মধ্যে বর্তমানে ব্যবধান অনেকটাই কমে এসেছে। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বহুলোক যেমন বরাক উপত্যকায় এসে চাকরি করছেন তেমনি এই উপত্যকার বহুলোকও কাজের সূত্রে রয়েছেন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায়। এই অবস্থায় পৃথক বরাকের প্রসঙ্গ উত্থাপনের পেছনে কি যুক্তি থাকতে পারে।
অন্য বক্তা বিধায়ক মনোরঞ্জন তালুকদার বলেন, গোটা দেশ বর্তমানে বিজেপি থেকে পরিত্রাণ চাইছে। ওই দলটাকে শুধু একবার ক্ষমতাচ্যুত করাই নয় চিরতরে বিদায় করতে হবে দেশ থেকে। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ য় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির মসনদে বসে ছিল বিজেপি। কিন্তু সেসব প্রতিশ্রুতির কিছুই পূরণ করা হয়নি। এরপর ২০১৯ এ পুলওয়ামা কাণ্ড ফের সুযোগ করে দেয় বিজেপিকে। তবে এবার আর কিছুতেই ডাল গলার নয়। দেশবাসীর ক্ষোভ চরমে আর বিরোধীপক্ষ একজোট হয়েছেন, তাই ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত।’
সভার শুরুতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের জেলা কমিটির সম্পাদক দুলাল মিত্র। এদিনের সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রেজামন্দ আলি বড়ভূইয়া, প্রতিমা দাস পাল, গোপাল ভূমিজ ও সুপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রমুখ।