ডিজিটাল সেফটির জন্য শক্তিশালী প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়া কৌশল অত্যন্ত জরুরি : জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব

জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১১ ডিসেম্বর : “নারী ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল সেফটির জন্য একটি শক্তিশালী এবং সমন্বিত প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়া কৌশল অপরিহার্য,” এ মন্তব্য করেন কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব। তিনি বুধবার জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের নবনির্মিত সম্মেলন কক্ষে ১৬ দিনের নারী নির্যাতন বিরোধী প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত জেলা-স্তরের স্টেকহোল্ডার কনসালটেশনে এক বিস্তৃত ও গভীর চিন্তাশীল বক্তব্য প্রদান করেন, যা পুরো অনুষ্ঠানটিকে এক অনুপ্রেরণামূলক সুর দেয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা আয়ুক্ত  বলেন যে, বর্তমান সময়ে ডিজিটাল ক্ষেত্রগুলি শারীরিক পরিবেশের মতোই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এগুলি প্রাথমিক যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠছে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন যে শিশু ও নারীরা প্রযুক্তির অপব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঝুঁকির মুখে থাকে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে প্রাতিষ্ঠানিক সচেতনতা এবং সময়মতো হস্তক্ষেপ না হলে অনলাইন হুমকি বাস্তব জীবনে বিপদের রূপ নিতে পারে।

দ্বি-মুখী কৌশলের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা শুরু করতে হবে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবারের ডিজিটাল সাক্ষরতা, এবং অনলাইন আচরণগত ধরণগুলির সক্রিয় পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে, যা কোনো ধরনের অপব্যবহারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন যে বিদ্যালয়, অভিভাবক, সমাজকর্মী এবং প্রশাসনিক বিভাগগুলিকে সম্মিলিতভাবে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে শিশুদের নিরাপদ অনলাইন আচরণ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হবে, অজানা লিংক, অনলাইন বন্ধুত্ব এবং সন্দেহজনক ডিজিটাল যোগাযোগের ঝুঁকি বোঝানো হবে এবং প্রয়োজনে কোথায় সাহায্য চাইতে হবে তা শেখানো হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা হতে হবে দ্রুত, সমন্বিত এবং ভুক্তভোগীকেন্দ্রিক। সাইবার বুলিং, ফিশিং, অনলাইন হয়রানি এবং আর্থিক প্রতারণার ক্রমবর্ধমান ঘটনাগুলির কথা উল্লেখ করে জেলা আয়ুক্ত বলেন, অধিকাংশ ভুক্তভোগী হুমকির গুরুত্ব বোঝেন না বা অনেক সময় জানাতে দ্বিধা করেন। তিনি সকল বিভাগকে নির্দেশ দেন যে যেকোনু ঘটনা যত ছোটই হোক না কেন গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ প্রশাসনিক, পুলিশ, আইনগত, কাউন্সেলর এবং সামাজিক সুরক্ষা সংস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে।

জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব ডিজিটাল সেফটিকে বাল্যবিবাহ ও পালিয়ে যাওয়ার মতো সামাজিক সমস্যার সঙ্গেও যুক্ত করেন এবং বলেন এ ধরনের বহু ঘটনার মূল কারণ অবাধ অনলাইন যোগাযোগ। তিনি বলেন, সতর্ক প্রশাসন, সজাগ অভিভাবক এবং সচেতন শিক্ষকেরা এই ধরনের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারেন। তিনি স্টেকহোল্ডারদের জেলা জুড়ে ডিজিটাল মনিটরিং টুল, জনসচেতনতা প্রচার এবং সংবেদনশীলতা বৃদ্ধির কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ একক কোনো বিভাগ ডিজিটাল সেফটি নিশ্চিত করতে পারে না। পুলিশ বিভাগ, মহিলা ও শিশু উন্নয়ন দফতর, ডিএলএসএ, ডিসিপিইউ, শিক্ষা বিভাগ, এনজিও, সিডব্লিউসি, ওএসসি প্রভৃতি সংস্থার মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমেই জেলার জন্য একটি সুরক্ষিত ডিজিটাল পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

উল্লেখযোগ্য যে, এই কর্মসূচিটি মহিলা সশক্তিকরণ কেন্দ্র (Sankalp Hub for Empowerment of Women), কাছাড়-এর উদ্যোগে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন বিভাগের অধীনে আয়োজিত হয় এবং এতে অংশগ্রহণ করেন অঞ্জলি কুমারী, এএসএস, সহকারী আয়ুক্ত তথা জেলা সমাজকল্যাণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক।

পুলিশ বিভাগ, ডিএলএসএ, এএসআরএলএম, স্বাস্থ্য বিভাগ, লোকাল কমপ্লেইন্ট কমিটি (POSH), শিক্ষা বিভাগ, এনজিও, ডিসিপিইউ, সিডব্লিউসি, ওএসসি, এবং বিভিন্ন জেলা-স্তরের অংশীদাররা এই পরামর্শ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *