বিদ্রোহী কবির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী পালন হাইলাকান্দিতে

বরাক তরঙ্গ, ২৫ মে : সমগ্ৰ দেশের সংগে সঙ্গতি রেখে হাইলাকান্দিতেও ভারতবর্ষের নবজাগরণ আন্দোলনে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়। শনিবার সকাল ৮ টায় শিববাড়ি নজরুলের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয় এআইডিএসও , কমসোমল, এআইডিওয়াইও এবং এআইএমএসএসের পক্ষ থেকে।

বিদ্রোহী কবির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী পালন হাইলাকান্দিতে

সকাল ৯ টায় ভেইয়ালা এলপি স্কুলে কমসোমলের উদ্যোগে নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বেলা ১২ টায় বাহাদুরপুর হাইস্কুলে শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। বিশিষ্ট শিক্ষক মিসবাউল রহমান চৌধুরী পরিচালনায় প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন। শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন বাহারুল ইসলাম লস্কর ,প্রজ্জ্বল দেব, সুশীল পাল, প্রভাসচন্দ্র সরকার, হাসন আলি সহ শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা। সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী নজরুল গীত পরিবেশন করার পর বিদ্রোহী কবিতা ও শিশুদের উপযোগী কবিতা পাঠ করা হয়। মুখ্য বক্তা এআইডিএসওর রাজ্য সভাপতি প্রজ্জ্বল দেব বলেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান, কবিতা সেদিন সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, তার গান কবিতা স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মনে প্রাণ সঞ্চার করেছিল, সমস্ত ভয় ভীতিকে জয় করে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে উজ্জ্বীবিত করেছিল। নির্যাতিত, নিপীড়িতদের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও তাদের মুক্তির আকাংখা তার সৃষ্টিতে তীব্র ভাবে ফুটে উঠেছিল।

বিদ্রোহী কবির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী পালন হাইলাকান্দিতে

নারী মুক্তির দাবি তার গান কবিতায় তীব্রতার সাথে ফুটে উঠেছিল। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তার কবিতায়, গানে যে তীব্র প্রতিবাদ ও আবেদন ধ্বনিত হয়েছিল তা জনমনকে আলোড়িত করেছিল। নজরুলের নিপীড়িত, নিষ্পেষিত মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ব, অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মন, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও প্রতিবাদ তার সৃষ্টিতে যে ঝড়ের সঙ্গে ফুটে উঠেছিল তা আজ শোষণ ,বঞ্চনা ও সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সংগ্রামরত ছাত্র যুবকের অনুপ্রাণিত করে, উদ্বুদ্ধ করে।

বিদ্রোহী কবির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী পালন হাইলাকান্দিতে

দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো যে হাজার হাজার বীর শহিদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হল যদিও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করল দেশের ধনিক পুঁজিপতি শ্রেণী। দেশের গরীব জনগণ আজ নিঃস্ব, রিক্ত। আজ মদ, ড্রাগস ও অশ্লীলতার বন্যায় ছাত্র যুবকদের নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যাচ্ছে। জাত পাত ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি করে দেশের সম্প্রীতির পরিবেশকে বিনষ্ট করা যাচ্ছে। অথচ সময়ের আহ্বান হচ্ছে উন্নত নীতি মূল্যবোধের ভিত্তিতে নতুন মানুষ গড়ে তোলা, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানসিকতা গড়ে তোলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ ঘুরিয়ে আনা। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, ক্ষুদিরাম, ভগৎ সিঙের স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতার পর এদেশে শোষণ বৈষম্যহীন সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত সুন্দর সমাজ গড়ে তোলা যা এখনো পূরিত হয়নি। মুষ্টিমেয় ধনিক পুঁজিপতি শ্রেণীর হাতে কুক্ষিগত এই দেশের সম্পদ। জনগণের বেঁচে থাকার নুন্যতম অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাই তাদের জীবন সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়ে এই বড় মানুষদের অপূরিত লক্ষ্য কে পূরণ করার জন্য সংগ্রামের শপথ নিতে হবে এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সংগ্ৰামকে যথাযথ ভাবে চর্চা করতে হবে। 

Author

Spread the News