মোহাম্মদ জনি, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১৮ ডিসেম্বর : নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মালেগড়ে সিপাহী বিদ্রোহের শহিদদের স্মরণ করে দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানানো হল। বৃহস্পতিবার এই ঐতিহাসিক স্থানে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালিত হলো শহিদ দিবস। দিনভর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অতীতের সেই বীরত্বগাথা নতুন করে স্মরণ করা হয় এবং দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করা হয় বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে।

প্রতিবারের ন্যায় এ বছরও ১৮৫৭ সালের ঐতিহাসিক সিপাহী বিদ্রোহের শহীদদের স্মরণে শ্রীভূমি জেলার লাতু মালেগড় এলাকায় বৃহস্পতিবার যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে শহিদ দিবস পালিত হয়। দিনভর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপনের মাধ্যমে। স্থানীয় জনগণ, ইতিহাসপ্রেমী মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি এক আবেগঘন রূপ নেয়। এই স্মৃতিস্তম্ভ দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় মানুষের কাছে প্রেরণার উৎস হিসেবে পরিচিত এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে জীবন্ত করে রেখেছে। বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সুসংগঠিত ও সর্বভারতীয় আন্দোলন হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত। এই আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী অসংখ্য শহিদের ত্যাগ দেশের স্বাধীনতার বীজ রোপণ করেছিল। মালেগড়ের এই ঐতিহাসিক ভূমি সেই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের নীরব সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা বলেন, এই স্মৃতিস্তম্ভ কেবল অতীতের স্মারক নয়, বরং নতুন প্রজন্মের কাছে দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও দায়িত্ববোধের শিক্ষা দেওয়ার এক শক্তিশালী মাধ্যম। তাই এই স্মৃতিস্তম্ভের যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আরও সুস্পষ্ট ও জীবন্ত করে তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়। শহিদ দিবসের এই কর্মসূচি শ্রীভূমি জেলা প্রশাসন, সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পাটকাই ট্রেকার্সের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। দিনভর আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইতিহাসচর্চা, স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভার মাধ্যমে শহিদদের বীরত্বগাথা তুলে ধরা হয়।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সার্কেল অফিসার জাগ্রীতি কালোয়ার, সহকারী আয়ুক্ত রংবামন টেরন, প্রাক্তন সাংসদ মিশন রঞ্জন দাস, বিএসএফ-এর কমান্ডেন্ট, পাটকাই ট্রেকার্সের সদস্যবৃন্দসহ জেলার বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও কর্মকর্তারা।বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে শহীদদের অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, এই আত্মবলিদান আজও আমাদের পথ দেখায় এবং জাতির প্রতি কর্তব্যবোধ জাগ্রত করে। তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, মালেগড়ের এই ঐতিহাসিক স্মৃতিচর্চা আগামী দিনেও দেশপ্রেমিক চেতনা জাগিয়ে তুলবে এবং তরুণ প্রজন্মকে দেশের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।


