বরাক তরঙ্গ, ১ ডিসেম্বর : আধুনিক এলএইচবি কোচে পরিবর্তিত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেন যাত্রা শুরু করল। সোমবার শিলচর রেলস্টেশনে ফ্ল্যাগ অফ করে ট্রেনের যাত্রার সূচনা করেন রাজ্যসভার সদস্য কণাদ পুরকায়স্থ, সঙ্গে ছিলেন শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী ধলাইয়ের বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস সহ রেলের আধিকারিকরা।
এতদিন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেনে ছিল আইসিএফ কোচ। প্রচণ্ড অসুবিধার সম্মুখীন হতেন যাত্রীরা।রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে এবিষয়ে দিল্লিতে তৎপর হয়ে ওঠেন সাংসদ কণাদ পুরকায়স্থ। একাধিকবার রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে মিলিত হন। সাংসদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শেষপর্যন্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেনের চারটি রেক এলএইচবি কোচে পরিবর্তিত হয়েছে।
এদিন ফ্ল্যাগ অব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংসদ কণাদ পুরকায়স্থ উল্লেখ করেন শুধু দূরপাল্লার নয়, বরাক উপত্যকায় যাতায়াত করা ট্রেন গুলোর কোচ পরিবর্তনের জন্য রেলমন্ত্রী কে চিঠি লিখেছেন। ট্রেনের এলএইচবি কোচ কেন প্রয়োজন, এবিষয়ে সাংসদ কণাদ পুরকায়স্থ বলেন, মান্ধাতা আমল থেকেই ট্রেনে রয়েছে আইসিএফ কোচ। যেসব কোচে নেই যাত্রী সাচ্ছন্দ্যের সুযোগ সুবিধা। বিশেষ করে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ, শৌচালয় সহ বৈদ্যুতিক বাতি, ফ্যান আদি নিয়ে প্রায়শই যাত্রীরা অভিযোগ করতেন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন রেল কর্মচারী ইউনিয়নও। রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর কাছে গিয়ে বিষয়টি তুলে ধরেন ইউনিয়নের কর্মকর্তারা। এরপর দিল্লি গিয়ে বিষয়টি নিয়ে রেলমন্ত্রীর নজরে আনেন। এছাড়াও শিলচর শহর সংলগ্ন ছোট দুধপাতিলে নতুন রেল স্টেশন নির্মাণ সহ লঙ্কা- চন্দ্রনাথপুর বিকল্প রেলপথ নির্মাণ, যাত্রী পরিষেবা বিষয়েও রেলমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শিলচর-শিয়ালদাহ রুটের কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেনের চারটি রেক এলএইচবি কোচে পরিবর্তিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও একটি ট্রেনের কোচ এলএইচবিতে পরিবর্তনের নির্দেশ জারি হয়েছে।

প্রসঙ্গক্রমে সাংসদ কণাদ পুরকায়স্থ উল্লেখ করেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই শিলচর পর্যন্ত ব্রডগেজ সম্প্রসারণ হয়। শিলচর পর্যন্ত দূরপাল্লার হোক, আর স্বল্প দূরত্বের ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু শিলচর রেলস্টেশনের পরিসর কম। ফলে স্টেশনকে যেমন বিশ্বমানের স্টেশনে উন্নীত করা সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি ট্রেনের সংখ্যাও আরও বৃদ্ধি করা মুশকিল। এমন প্রেক্ষাপটে ছোট দুধপাতিলে নতুন রেল স্টেশন হল সময়ের দাবি। সেকথাই রেলমন্ত্রীকে জানিয়েছেন তিনি। দৃঢ় প্রত্যয়ে সাংসদ কণাদ পুরকায়স্থ বলেন, বরাক উপত্যকায় যাতায়াত করা ট্রেন পরিষেবা আরও উন্নত এবং আধুনিক হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে তিনি সদা সচেষ্ট থাকবেন বলেও আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে ছিলেন শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ট্রেনের কোচ পরিবর্তনের দাবি দীর্ঘদিনের। কেননা আইসিএফ কোচ গুলো বহু পুরানো। প্রায় সত্তর বছর ধরেই শিলচরে যাতায়াত করছে আইসিএফ কোচ যুক্ত ট্রেন। কিন্তু কংগ্রেসের দীর্ঘ শাসনামলে কোচ গুলো বদলের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এবিষয়ে ২০২২ সালে এসম্পর্কে রেল মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি তিনিও দিয়েছিলেন। তবে কণাদ পুরকায়স্থ সাংসদ নির্বাচিত হয়ে এই দাবি আদায়ে ঐকান্তিক প্রয়াস চালিয়ে যান।সাংসদ ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজকের দিনে শিলচর থেকে এলএইচবি কোচ যুক্ত ট্রেনের যাত্রা শুরু হল। সেজন্য সাংসদ কণাদের ভূমিকার ভূয়শী প্রশংসা করে বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের নেতৃত্বে শিলচর পর্যন্ত পৌঁছে ব্রডগেজ রেলপথ। তখনও অনেকেই সমালোচনা করেন। এপ্রসঙ্গেই কংগ্রেসের কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন বিধায়ক। তিনি বলেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে রেলের পরিকাঠামো এবং পরিষেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। যা কংগ্রেস সত্তর বছরের কার্যকালেও করতে পারেনি।

এদিন ফ্ল্যাগ অব অনুষ্ঠানে প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে এলএইচবি কোচের সুযোগ-সুবিধা সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাজ্যসভার সাংসদ কণাদ পুরকায়স্থের বলিষ্ঠ ভূমিকার উচ্ছসিত প্রশংসাও করেন এনএফ রেলের আধিকারিক সিডিও গিরিধারীলাল জাকর, এসডিই সুনীল থুলিয়া, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের জেআরইউসিসির সদস্য হারাণ দে প্রমুখ। ছিলেন শিলচরের স্টেশন সুপার বিক্রমজিত নাথ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিটিআই ভজন সরকার।


