মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ২৬ নভেম্বর : ক্ষুদ্র জলাশয় থেকে বড় স্বপ্ন, অসমের মৎস্য উৎপাদনে বিপ্লব আনতে সরকারের বৃহৎ উদ্যোগ।জৈব বৈচিত্র্য রক্ষায় আদর্শ মডেল হতে চলেছে বলেন অসম বিধানসভায় আশাবাদী মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুর। বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন ২০২৫–২৬-এর দ্বিতীয় দিন বুধবার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনার সাক্ষী হয়।
এদিন পাথারকান্দি বিধায়ক তথা রাজ্যের মীন, পশুপালন, ভেটেনারি ও পূর্ত বিভাগের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল সদনে জলাভূমি সংরক্ষণ, ক্ষুদ্র মৎস্যজলাশয় উন্নয়ন এবং দেশীয় ছোটো মাছের সুরক্ষার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি বিস্তৃত ও তথ্যভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন।সদনে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী সর্বপ্রথম আসামের ভূপ্রকৃতি ও পরিবেশব্যবস্থার অনন্য বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন আসাম সত্যিই একটি নদীমাতৃক রাজ্য। ব্রহ্মপুত্র ও বরাককে কেন্দ্র করে বিস্তৃত এই ভূখণ্ড অসংখ্য খাল-বিল, জলাভূমি, আদ্রভূমি এবং প্রাকৃতিক জলাশয়ে সমৃদ্ধ। এই সমগ্র জলজ পরিবেশ আমাদের জৈব বৈচিত্র্যের মূল ভিত্তি, আর দেশীয় মাছ তার অন্যতম মূল্যবান সম্পদ। মন্ত্রী আরও জানান যে, কেন্দ্রীয় আন্তঃদেশীয় মীন গবেষণা কেন্দ্রের সর্বশেষ ব্যাপক জরিপ অনুসারে আসামে বর্তমানে প্রায় ২১৬ প্রজাতির দেশীয় মাছ চিহ্নিত হয়েছে। এর অধিকাংশই প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে আহরিত, যা প্রমাণ করে যে—জলাভূমি আসামের খাদ্যনিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং গ্রামীণ জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ।তিনি বলেন প্রতিটি জলাভূমি কেবল জলাশয় নয় এটি খাদ্যভাণ্ডার, পরিবেশের রক্ষাকবচ, এবং গ্রামীণ সমাজের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি।
এদিন মন্ত্রী সরকারের দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপের বিস্তারিতও তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন মীন নীতি ১৯৫৩ (সংশোধিত ২০০৫) অনুযায়ী প্রতিবারের মতোই ১ এপ্রিল থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত মাছের প্রধান প্রজনন মৌসুমে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ ধরা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।এরপরও ঘন জাল ব্যবহারের মতো অবৈধ পদ্ধতি বহু অঞ্চলে দেখা যায় যা দেশীয় মাছের বংশবৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্বশর্মার ব্যক্তিগত আগ্রহ ও হস্তক্ষেপকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী দুই মাস আগে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে জনগণকে আহ্বান করেছিলেন প্রজনন মৌসুমে ঘন জাল ব্যবহার বন্ধ করেতে ডিম-সহ মাছ বিক্রি না করতে মীন আইন কঠোরভাবে মেনে চলতে মন্ত্রী পাল বলেন জনগণের সহযোগিতা ছাড়া মাছ সংরক্ষণ সম্ভব নয়। তাই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই মানুষকে সচেতন করেছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। মন্ত্রী জানান, মাছ সংরক্ষণে সরকার ইতোমধ্যেই বহু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ফিশারি বিভাগের আধিকারিক ও জেলা টাস্ক ফোর্স নিয়মিত বাজারে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। ডিমযুক্ত মাছ বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।প্রজননের পরে আরও দুই মাস পোনা মাছ ধরা নিসিদ্ধ রাখলে মাছের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, উৎপাদন বাড়লে মৎস্যজীবীদের আয় বাড়বে, গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং বাজারে দেশীয় মাছের জোগান নিশ্চিত হবে।
মন্ত্রী তার বক্তব্যে সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্বশর্মার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে আসামের মোট মাছ উৎপাদন ৭ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত করা।এই লক্ষ্য পূরণে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে টেকসই জলাভূমি ব্যবস্থাপনাদেশীয় মাছের প্রাকৃতিক আবাসস্থল পুনরুদ্ধার ক্ষুদ্র মৎস্যজলাশয়ের বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন স্থানীয় জনগণকে নিয়ে কমিউনিটি-ভিত্তিক সংরক্ষণ উদ্যোগ। মন্ত্রী বলেন আমাদের লক্ষ্য শুধু মাছের উৎপাদন বাড়ানো নয়, বরং একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশব্যবস্থা রক্ষা করা, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও উপকারী হবে।নিজ বক্তব্যের শেষাংশে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল আশাবাদ ব্যক্ত করেন সরকারি পরিকল্পনা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ এই চার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আমরা আসামকে দেশীয় মাছের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করব। আমাদের জলাভূমি বাঁচলে, আমাদের অর্থনীতি ও জীবিকা দুটিই শক্তিশালী হবে।


