শিলচরে ধামাইল নৃত্য ও কন্যা প্রতিযোগিতার সূচনা
দীপ দেব, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ২৭ ডিসেম্বর : শিলচরের নর্মাল স্কুলের কাছে চিলড্রেনস পার্ক মঞ্চে সম্মিলিত লোকমঞ্চের উদ্যোগে ধামাইল নৃত্য ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতার পঞ্চম সংস্করণ শনিবার উদ্বোধন হয়েছে। ‘এসো, ধামাইলে পা মেলাই’ শিরোনামে আয়োজিত এই দুই দিনের সাংস্কৃতিক উৎসব ২৮ ডিসেম্বর রবিবার সমাপ্ত হবে। প্রায় ৪০টি নৃত্যদলের অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠান কাছাড় জেলা ছাড়িয়ে সমগ্র বরাক উপত্যকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অনুষ্ঠানে ধামাইল নৃত্য প্রতিযোগিতা ২০২৫, ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতা ২০২৫ এবং গৌরশঙ্কর নাথের ভাবনায় পরিকল্পিত ধামাইল আলোকচিত্র প্রদর্শনী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
লোকমঞ্চের সম্পাদক ভাস্কর দাস স্বাগত ভাষণে বলেন, “এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ধামাইলের মতো লোকনৃত্যকে সংরক্ষণ ও প্রসারিত করা। গত ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে লোকমঞ্চ লোকসঙ্গীত নিয়ে কাজ করে আসছে এবং প্রতি বছর নতুন দিক যোগ করা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, ‘লোকোকণ্ঠ’ নামে মাসিক অনুষ্ঠানও নিয়মিত আয়োজিত হয়। পঞ্চম সংস্করণে বরাক উপত্যকা স্তরে সম্প্রসারণ এবং সরকারি সহায়তার আশা প্রকাশ করেন ভাস্কর দাস।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ড. বিশ্বতোষ চৌধুরী বাংলা সংস্কৃতি, রীতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক তথ্য বিকৃত না করে সংরক্ষণ করতে হবে।” বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও কবি অতীন দাশ প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। আয়োজকদের শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “ধামাইল গানের বৈচিত্র্য বিভিন্ন সামাজিক উপলক্ষের সঙ্গে যুক্ত। এগুলো বাঁশ নৃত্য, ডিমাসা নৃত্য এবং পঞ্জাব, কর্ণাটক, কেরল ও গুজরাটের লোকনৃত্যের সঙ্গে তুলনীয়। সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয়তা ও অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে।” নৃত্যশিক্ষিকা নন্দিনী চক্রবর্তী বলেন, “লোকসংস্কৃতি প্রজন্মান্তরে পারিবারিক জীবনের অঙ্গ। শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয় এই প্রকৃত রূপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পৌঁছে দিচ্ছে।” লোকমঞ্চের সভাপতি ও কাছাড় কলেজের অধ্যক্ষ ড. অপ্রতিম নাগ বলেন, “অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে গর্বিত।”
লোকগবেষক ড. অমলেন্দু ভট্টাচার্য ধামাইলের গান, পোশাক ও অলঙ্কার সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বিশিষ্ট লোকশিল্পী বীণাপাণি নাথ আশীর্বাদ জানিয়ে বলেন, “সাংস্কৃতিক চর্চা মানুষের মনকে প্রশান্ত করে। বাঙালিরা সংস্কৃতি সংরক্ষণে সচেতন হোক।” অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দেবাশিস পুরকায়স্থ।
এদিন বিশেষ মুহূর্ত ছিল দৃষ্টিহীন শিল্পী মৃদুলকুমার পালের সঙ্গীত পরিবেশনা, যা দর্শকদের উষ্ণ প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনুষ্ঠানে কৃষ্ণেন্দু নাথ, কানাইলাল দাস, গৌতম সিনহা, মনিমিতা গোস্বামী, রসরাজ দাস, শান্তনু রায়, ঝিমলি নাথ, দীপক নাথ, রূপম ভৌমিক, মৌলি চক্রবর্তী, জয়দীপ চক্রবর্তী, মঙ্গল নাথ, পার্থ শীল সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। লোকমঞ্চের এই উদ্যোগ বরাক উপত্যকার লোকসংস্কৃতির প্রসারে নতুন আলোয় আলোকিত হচ্ছে।


