বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি জনগোষ্ঠীর ন্যায়সঙ্গত দাবি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা হংসরাজ গঙ্গারামের


মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ১৪ নভেম্বর : অসমের বৃহত্তর বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নে একাধিক দিক থেকে জোরদার উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের মীন, পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী তথা পাথারকান্দির  বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল। সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত কয়েক মাস ধরে তিনি রাজ্য ও কেন্দ্র, উভয় স্তরে একাধিক বৈঠক, আলোচনা ও পত্রব্যবহারের মাধ্যমে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরছেন। মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পালের উদ্যোগে সম্প্রতি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় অনগ্রসর তফসিলি জাতি গোষ্ঠী কমিশনের চেয়ারম্যান হংসরাজ গঙ্গারাম আহির এর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ইউনাইটেড ইয়ুথ অর্গেনাইজেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি বিমল সিনহা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অনগ্রসর তফসিলি জাতি গোষ্ঠী আয়োগের অধ্যক্ষ অজয় কোঁওর। দীর্ঘ আলোচনায় বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী জনগোষ্ঠী ছাড়াও আসামের আরও ছয়টি পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়। বৈঠকে সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, আর্থ-সামাজিক পিছিয়ে পড়া অবস্থা, চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য—সব তথ্য নথিভুক্ত আকারে উপস্থাপন করেন তারা।

দিল্লির বৈঠক চলাকালে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ফোনে চেয়ারম্যান হংসরাজ গঙ্গারাম আহির এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।মন্ত্রী পাল বিশেষভাবে অনুরোধ জানান বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি জনগোষ্ঠীকে শীঘ্রই কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক। সম্প্রদায়টি দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনার শিকার; তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

এ সময় তিনি কেন্দ্রীয় কমিশনকে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে অসম সফরের সময়ে পাথারকান্দিতে আমন্ত্রণ জানান, যাতে সরাসরি জনগণের মুখ থেকে তাঁদের দাবি ও সমস্যাগুলি শুনতে পারেন। চেয়ারম্যান হংসরাজ গঙ্গারাম আহির মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পালের প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান বিমল সিনহার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি মহাসভা এবং বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি উন্নয়ন পর্ষদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।তাঁরা সম্মিলিতভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল, চেয়ারম্যান হংসরাজ গঙ্গারাম আহির, অধ্যক্ষ অজয় কোঁওর এবং বিজেপি ওবিসি রাজ্য সভাপতি সুভাষ দত্তকে। সম্প্রদায়ের মতে, বহু দশকের দাবিতে এবার বাস্তব অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে, যা আঞ্চলিক জনসমাজে আশার সঞ্চার করেছে।আজ আবার নতুন দিল্লিতে বিজেপি ওবিসি রাজ্যিক সভাপতি সুভাষ দত্ত, সঙ্গে বিমল সিনহা, কেন্দ্রীয় কমিশনের চেয়ারম্যান হংসরাজ গঙ্গারাম আহির এর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সাক্ষাৎ করেন।এবার আলোচনায় উঠে আসে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি সম্প্রদায় ছাড়াও আরও কয়েকটি অনগ্রসর শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর সামাজিক–অর্থনৈতিক অবস্থার দুরবস্থা। তাঁদেরও কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।

জানা গেছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে কমিশনের প্রতিনিধি দল অসম সফরে আসছে। এই সফরে তারাবিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বক্তব্য সংগ্রহ, প্রমাণপত্র যাচাই এবং সামনে–পিছনের আর্থ–সামাজিক তথ্য সংগ্রহ করবে। এই শুনানির পরই কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে বলে সূত্রের খবর। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সমাজের বহু প্রবীণ নেতা জানান আসামের উন্নয়নযাত্রায় আমরা সবসময় অবদান রেখেছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় তালিকায় অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষা–চাকরি–সরকারি সুবিধায় বঞ্চনা বজায় রয়েছে। মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পালের প্রচেষ্টা আমাদের জন্য ঐতিহাসিক হতে পারে।এখন সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা এই ধারাবাহিক প্রচেষ্টা ও ইতিবাচক অগ্রগতির মাধ্যমে তাঁদের ন্যায্য দাবি বাস্তবে রূপ নেবে। পাথারকান্দির জনপ্রিয় জননেতা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পালের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় স্তরে জোরালোভাবে বিষয়টি আলোচিত হওয়ায় বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি জনগোষ্ঠী নতুন আশার আলো দেখছে। কেন্দ্রীয় কমিশনের আগত শুনানি ও পরবর্তী সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে—দীর্ঘদিনের এই গণদাবি পূরণ হবে কি না। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন যে দ্রুত ঘটছে, তা নিয়ে সম্প্রদায় এবং স্থানীয় জনমহলে নতুন উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *