শিলচরে “গান ঙাই” রংমাই নাগা সম্প্রদায়ের পাঁচদিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবের সম্পন্ন
বরাক তরঙ্গ, ২৬ ডিসেম্বর : প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও শিলচর ফাটকবাজার রোড রংমাই নাগাপুঞ্জিতে রংমাই নাগা সম্প্রদায়ের পাঁচদিন ব্যাপী “গান ঙাই” বার্ষিক সাংস্কৃতিক উৎসবের নানা রংমাই নাগাদের ধর্মীয় নীতি -নিয়ম মেনে মঙ্গলবার সমাপন ঘটে। রংমাই নাগা সম্প্রদায়ের অন্যান্য উৎসব থাকলেও “গান ঙাই” উৎসব হল রংমাই নাগা অর্থাৎ জেলিযাংরং নাগা সম্প্রদায়ের সর্বশ্রেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব। এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় শীতের মরসুমের প্রাক্কালে মাঠে ফসল কাটা এবং শস্য সংগ্রহ করে শুরু হয়ে যায় এই উৎসবের পাক প্রস্তুতি। রংমাইনা কাদের নিজস্ব লুনার ক্যালেন্ডার এর মতে দশম মাসের নোগান বুতে গান ঙাই উৎসব পালন করা হয়। দশম মাসে গান বুটে নতুন চান দেখার সঙ্গে- সঙ্গে মহিষের শিং -এর দ্বারা তৈরী বাঁশি বাজিয়ে গান ঙাই উৎসবকে স্বাগত জানানো হয়। এরপর প্রত্যেক গ্রামে গ্রাম পরিষদ (পাইকাই) পক্ষ থেকে উৎসবের দিনটি নির্ধারিত করে ঘোষণা করা হয়। এই পাঁচটি দিনের নাম হল (১) তারাও ঙাই, রেংরানা,রেংপামনা (২) ঙাই কাডাই বা তামচা (৩) রামফান (৪) পুমথান বা রিলিয়ান ফিয়ান না (৫) নাপচান, তারাও ঙাই দেবতা, সেই দিন খুব ভোরে গাঁও বুড়া গ্রামের শেষ সীমায় স্থানীয় দেবতাদের উদ্দেশ্যে মদ এবং আদা দিয়ে পূজা করা হয়।
অন্যদিকে সেই দিনের চলতি বছরের যাহাদের মৃত্যু হয়েছে, সেই পরিবারের লোকজন সহ নিকটতম আত্মীয় -পরিজনেরা খুব দূরে কবরস্থানে গিয়ে মৃত ব্যক্তির সমাধির স্থানটি সুন্দরভাবে সাজিয়ে ফুল-ফল ও খাদ্য সামগ্রী দিয়ে মৃত ব্যক্তির নামে উৎসব পালন করে তাঁকে শেষ বিদায় দেওয়া হয় এবং সেই দিন বিকেলে ঐতিহ্যবাহী খেলা অনুষ্ঠিত হয়, খেলার মধ্যে রয়েছে পাথর ছোড়া, কুস্তি যুদ্ধ, লং জাম -হাই জাম প্রভৃতি খেলা। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ “তামচা বা ঙাই কাডাই”সেই দিন প্রাপ্তবয়স্ক অবিবাহিত ছেলেমেয়েরা নিজ নিজ আলোয় অর্থাৎ “খাংচু” পুরুষালয় এবং কাইলুতে (কুমারীলয়) হাঁস, মুরগি, শাক-সব্জি প্রভৃতি নথিভুক্ত করা নীতি নিয়ম আছে, পরে নিজ নিজ আলোয় ভুজন করে দুপুরে সাংস্কৃতিক গান নাচ পরিবেশন করা হয়। এবং সন্ধ্যায় “কাইলু” অবিবাহিত যুবক-যুবতীদের সাংস্কৃতিক গান প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তৃতীয় দিন অর্থাৎ “রামফান” দিনের খুব ভোরে “রেংবাং” অর্থাৎ গ্রামের সীমান্তে গাঁও বুড়াগন আট জন আরাধ্য দেবতা ও স্থানীয় দেব-দেবী সহ উপ দেবতাদের উদ্দেশ্যে মুরগি উৎসর্গ দিয়ে পূজা করা হয়। দুপুরে আবার নাচ-গান করা হয়, চলতি বছরে যাদের মৃত্যু হয়েছে ,তাঁদের উদ্দেশ্যে যুবক-যুবতীরা সাংস্কৃতিক নৃত্য পরিবেশন করেন মৃত হওয়া ব্যক্তিদের শেষবারের মতো বিদায় দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
চতুর্থ দিন অর্থাৎ “পুংথান” দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে যুবক- যুবতিরা পৃথক- পৃথক ভাবে চাউল সংগ্রহ করে নিজ- নিজ আলয়ে ভাত রান্না করে থাকেন। বিকেলে “খাংচুতে” চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী বাঁশ এবং বেঁতের ঘরষন করে আগুন বের করে ঘরে- ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই দিন হল শুদ্ধ হওয়ার দিন, কাজেই সেই দিন স্বামী ও স্ত্রী একসাথে থাকতে পারেন না। পঞ্চম দিন অর্থাৎ “নাপচান” হল উৎসবের শেষ দিন সেই দিনে বিবাহিত মহিলা এবং পুরুষেরা নাচ-গান করে আনন্দের সহিত এই পাঁচদিন ব্যাপী “গান ঙাই” রংমাই নাগা সম্প্রদায়ের বাৎসরিক সাংস্কৃতিক উৎসবটির শেষ ঘোষণা করা হয়।এই পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় ছিলেন লানখুইপৌ রিয়ামাই, মাথুঙামপৌ কামাই, গানপী (যুব নির্দেশক) কাগুইলোয়াং থিয়ানদাই খাংচূ, কাবুইকিং ডাহেংমাই, সিনখেক মাকুয়াক, কাগুইলোয়াং, থিয়ানদাই খাংচু সহ অন্যান্যরা।
প্রতিবেদক : দীপ দেব, শিলচর।