ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি কতৃক ‘সিইউইটি’ পরীক্ষা চালুর তীব্র বিরোধিতা ডিএসও-র
বরাক তরঙ্গ, ২৭ মার্চ : আজ এআইডিএসও’র আসাম রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে স্নাতকস্তরে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় স্তরে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি কতৃক ‘সিইউইটি’ পরীক্ষা চালুর তীব্র বিরোধিতা করে রাজ্য ভিত্তিক প্রতিবাদ দিবস পালন করা হয়। সংগঠনের করিমগঞ্জ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে আজ ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির ডাইরেক্টর জেনারেলের নিকট জেলাশাসক মারফত স্মারকপত্র প্রদান করে দাবি জানানো হয় যে শিক্ষার কেন্দ্রীয়করণের নীল নকশা ও গরীব ছাত্র বিরোধী এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। সংগঠনের জেলা সভাপতি সুজিৎ কুমার পাল এবং রাজ্য কমিটির অন্যতম সদস্য রূপশ্রী গোস্বামীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল জেলাশাসকের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলাশাসক ধ্রুবজ্যোতি দেবের হাতে স্মারকপত্র তুলে দিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানান এই পরীক্ষায় যেসব ছাত্র বিরোধী ও শিক্ষা বিরোধী নীতি নিয়ম প্রর্বতন করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ব্যক্ত করার জন্য ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির ডিরেক্টর জেনারেলকে স্মারকপত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
স্মারকপত্রে বরাক উপত্যকায় শুধু শিলচরে একটি মাত্র পরীক্ষা কেন্দ্র থাকার তীব্র বিরোধিতা করে করিমগঞ্জেও “সিইউইটি” পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানানো হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয় যে অন্যথায় গরীব ঘরের পরীক্ষার্থীরা গাড়ী ভাড়া, হোটেল খরচ সহ অন্যান্য আনুসাংগিক খরচের অর্থ জোগাড় করতে না পেরে পরীক্ষায় বসার সুযোগম থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়াও বলা হয় যে এই পরীক্ষায় আসামের পরীক্ষার্থীদের শুধু অসমীয়া ও ইংরেজিতে প্রশ্ন পত্র দেওয়া হবে বলে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি যে জারি করেছে তা পরিবর্তন করে রাজ্যের অন্যান্য মাধ্যম যথাক্রমে বাংলা, হিন্দি, বড়ো, মণিপুরী ইত্যাদিতে পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীদের জন্য তাদের নিজস্ব মাধ্যমের ভাষায় প্রশ্নপত্র প্রদানের দাবিও জানানো হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মারকপত্রে দাবি জানানো হয় যে ‘সিইউইটি’ পরীক্ষার আবেদন পত্রে আধার নম্বর প্রদান বাধ্যতামূলক করায় করিমগঞ্জ সহ রাজ্যের বিশাল অংশের ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পারেনি। কারণ রাজ্যে এনআরসি জটিলতায় ২৭ লক্ষ নাগরিকের আধার কার্ড আটকে রয়েছে। তারা বার বার চেষ্টা করেও বিফল হয়েছেন এবং এদের মধ্যে বিশাল সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীরাও রয়েছে। তাই আসামের ছাত্র ছাত্রীদের ক্ষেত্রে আধার কার্ডের পরিবর্তে অন্যান্য পরিচয় পত্রের মান্যতা দেওয়ার দাবিও জানানো হয়। তাছাড়াও স্মারকপত্রে দাবি করা হয় যে এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে কোন মাশুল নেওয়া চলবে না।
উল্লেখ্য, এই পরীক্ষার জন্য ১৪০০ টাকা ফিজ ধার্য করা হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে ছাত্র ছাত্রীদের মতের সম্পূর্ণ বিপরীতে এই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ছাত্র ছাত্রীরা নিজস্ব এলাকার কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে কি না তা নিশ্চিত নয়। তাছাড়া যারা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবে তারা কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারবে না ফলে তাদের শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে যাবে। ছাত্র ছাত্রীদের স্বার্থের পরিপন্থী এই পরীক্ষা আয়োজন না করার দাবি এআইডিএসও’র পক্ষ থেকে শুরু থেকেই করা হচ্ছে কিন্তু বিজেপি পরিচালিত বিগত সরকার ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যত বিপন্নকারী একের পর এক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে। তাই ছাত্র ছাত্রীরা যাতে অন্তত পরীক্ষায় বসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত না হয় তার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবিগুলো তুলে ধরা হয়।
স্মারক পত্রে উত্থাপিত সমস্যার সমাধানের দাবিতে, বিশেষ করে করিমগঞ্জে পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা, বাংলা, হিন্দী, মণিপুরী ভাষায় প্রশ্নপত্র প্রদান ইত্যাদির জন্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, করিমগঞ্জ জেলা আয়ুক্তের হস্তক্ষেপও কামনা করা হয়।
এআইডিএসও ‘র পক্ষ থেকে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের এই গরীব ছাত্রছাত্রী বিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠার আহ্বান জানানো হয়।