ডিলিমিটেশন : কালো দিবস পালনে ব্যানার ও পতাকা নিয়ে টানাটানি পুলিশের সঙ্গে শিলচরে
বরাক তরঙ্গ, ৪ সেপ্টেম্বর : নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি, আসাম এর পরিচালন সমিতির আহ্বানে গোটা বরাক উপত্যকার সাথে শিলচরেও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অসাংবিধানিক ভাবে ডিলিমিটেশনের বিজ্ঞপ্তির জারির বিরুদ্ধে কালো দিবস পালন করা হয়। সোমবার সিআরপিসিসি, আসাম এর পরিচালন সমিতির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোরে বিভিন্ন সংগঠন শিলচরের সদরঘাট, ক্লাব রোড, রাঙ্গীরখাড়ি, ন্যাশনাল হাইওয়ে, তারাপুর সহ বিভিন্ন স্থানে কালো পতাকা টাঙ্গিয়ে দেয়।
এছাড়াও রাঙ্গিরখাড়ির নেতাজি মূর্তি, তারাপুরের রবীন্দ্র মূর্তি, সদরঘাটের স্মামী বিবেকানন্দ মূর্তি ও ক্লাব রোডের শহিদ ক্ষুদিরাম মূর্তির সামনে পরিচালন সমিতির অন্তর্ভুক্ত কংগ্রেস, সিপিআই, এসইউসিআই (সি), সিপিআই (এমএল) লিবারেশন দল সহ প্রস্তাবিত ডিলিমিটেশন বিরোধী মঞ্চ, ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি, এআইইউটিইউসি, এআইসিসিটিইউ, এআইডিএসও, অমস মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন, হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ, নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ, অল ইণন্ডিয়া মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠন, নারী মুক্তি সংস্থা, ইয়াসি সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে জনসাধারণের মধ্যে কালো ব্যাজ বিতরণ করেন।
দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ পরিচালন সমিতির অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা ক্ষুদিরাম মূর্তির সামনে সংগঠনের ব্যানার ও কালো পতাকা নিয়ে শান্তিপূৰ্ণ ভাবে দাঁড়িয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে গেলে পুলিশ বাধা দেয় এবং কালো পতাকা ও ব্যানার ধরে টানাটানি শুরু করে। শান্তিপূৰ্ণ অবস্থানে ১৪৪ ধারা জারি না থাকা সত্ত্বেও পুলিশ প্রশাসনের এধরনের আচরণে সবাই হতবাক হয়ে যায়। সিআরপিসিসি, আসাম এর অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার ভট্টাচার্য শহরের প্রবীণ নাগরিকদের উপস্থিতিতে শান্তিপূৰ্ণ প্রতিবাদী কার্যসূচীতে বাধাদানের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে বলেন যে রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জনগণের দাবি নিয়ে যে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠিত করার অনুমতি চাইলে তা প্রদানের পরিবর্তে তা ভেস্তে দিতে প্রশাসন চাপ সৃষ্টি করে। তিনি বলেন কালো দিবস পালনের অনুমতি চেয়ে গত ৩০ আগস্ট জেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন জানানো হলেও গতকাল রাতে তা অনুষ্ঠিত করা যাবে না বলে জেলা প্রশাসন জানায়। অথচ গত ২০ আগস্ট শিলচরে বরাক উপত্যকার তিন জেলার বিশিষ্ট নাগরিক, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি সভায় চার সেপ্টেম্বর কালো দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যা সমস্ত সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়। জেলা প্রশাসন এব্যাপারে সম্পূর্ণ অবহিত থাকলেও বরাক উপত্যকার জনগণের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে যাতে কেউ একটি শব্দ উচ্চারণ করতে না পারে তার জন্য উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির অঙ্গুলি হেলনে দিসপুরের নির্দেশে তা বানচাল করতে তৎপর হয়ে উঠে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে এও বলা হয় যে আজ ভোরে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে কালো দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে যেসব কালো পতাকা ও ব্যানার টাঙ্গানো হয়েছিল তা পুলিশ সকাল ৯ টার মধ্যে খুলে নিয়ে যায়। বরাক উপত্যকার দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা আসন কমিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ করার অধিকার কোন আইনে জেলা প্রশাসন আটকে দিচ্ছে তা নিয়ে সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ডিলিমিটেশন আইন উলঙ্ঘন করে আসামে বিধানসভা ও লোকসভার সীমানা পুনর্নির্দ্ধারণের যে কাজ করেছে এর বিরুদ্ধে যারা সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন তা এখনও বিচারাধীন। ফলে এই আন্দোলন নির্বাচন কমিশনের অন্যায়ভাবে জারি করা বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে। রাজ্যের শাসক দলের বহু নেতা সরাসরি এই বিজ্ঞপ্তি জারির বিরোধিতা করেছেন অথচ অসম সরকার উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির কুচক্রান্তকে বাস্তবায়িত করতে রাজ্যে অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি করে রেখেছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে এই আন্দোলন থেমে থাকবে না, সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করতে সংগঠনের পক্ষ থেকে এক প্রতিনিধি দল দিল্লিতে যাচ্ছেন এবং পাশাপাশি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। আজকের প্রতিবাদী কার্যসূচীতে অংশ গ্রহণ করেন নির্মলকুমার দাস, সুব্রতচন্দ্র নাথ, সিহাবউদ্দিন আহমেদ, শ্যামদেও কুর্মী, নিতীশ দে, অতনু ভট্টাচার্য, হরিদাস দত্ত, ভবতোষ চক্রবর্তী, মাধব ঘোষ, অধ্যাপক অজয় রায়, আশু পাল, লেখিকা আদিমা মজুমদার, অরিন্দম দেব, মানস দাস, বিশ্বজিত দাস, হায়দার হোসেন চৌধুরী, অসীম নাথ, গৌরাঙ্গ নাথ, দুলালী গাঙ্গুলি, চাম্পালাল দাস, নকুলরঞ্জন পাল, হিল্লোল ভট্টাচার্য, মধুসূদন কর, মৃনাল কান্তি সোম, অঞ্জনকুমার চন্দ, গৌরচন্দ্র দাস, দিলীপ নাথ প্রমুখ।