কান্নার রোল গেলাপুখুরী চা-বাগানে, পৌঁছল ছয় শ্রমিকের মৃতদেহ

বরাক তরঙ্গ, ১৩ ডিসেম্বর : গেলাপুখুরী চা-বাগানে চারদিকে শুধুই কান্নার রোল। আপনজনকে হারিয়ে একের পর এক মানুষ ভেঙে পড়ছেন। সারিবদ্ধভাবে ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সে করে ছয়জন শ্রমিকের মৃতদেহ গেলাপুখুরী চা-বাগানে পৌঁছানোর পর এমন এক করুণ দৃশ্যের সৃষ্টি হয়, যা কল্পনাও করা যায় না। সেই দৃশ্য দেখে সকলের হৃদয় কেঁদে ওঠে।

পূর্ব থেকেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুত করে রাখা খেলার মাঠে শনিবার ছয়জন শ্রমিকের মৃতদেহ আনা হয়। মৃতদেহ পৌঁছানোর পর চারদিকে শুধুই কান্নার রোল। পরিবারের সদস্যরা আপনজনকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। খেলার মাঠেই একের পর এক মানুষ ঢলে পড়েন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্ত ব্যবস্থা সম্পন্ন করার পাশাপাশি শেষ বিদায় জানাতে স্থানীয় মানুষজন একত্রিত হন।

আজ আসা ছয়জন শ্রমিকের মৃতদেহের মধ্যে রয়েছেন গেলাপুখুরী চা-বাগানের অভয় ভূমিজ, সঞ্জয় কুমার, অগর তাঁতী, রাজনী নাগ, রাহুল কুমার এবং ধেলাখাট চা বাগানের জুনাস মুন্ডা। পরবর্তীতে সরকারি শ্মশানে প্রস্তুত করা স্থানে বহু মানুষের উপস্থিতিতে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

গত ৮ ডিসেম্বর, সোমবার অরুণাচল প্রদেশের ভারত–চিন সীমান্তে সংঘটিত এক দুর্ঘটনায় মোট ২১ জন শ্রমিক নিহত হন। পুরো ঘটনা বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে আসার পর শুক্রবার এনডিআরএফ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে প্রায় ৭০০ মিটার গভীরতা থেকে ৬ জন শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এরপর অরুণাচল প্রদেশেই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে শনিবার প্রথমে মৃতদেহগুলি তিনসুকিয়ায় আনা হয় এবং তিনসুকিয়া মেডিক্যাল কলেজে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়। পরে সারিবদ্ধভাবে ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সে করে ছয়জন শ্রমিকের মৃতদেহ গেলাপুখুরী চা-বাগানে নিয়ে আসা হয়।

এদিকে, শুক্রবার ৬ জন শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধারের পর আজ সকাল থেকে চালানো অভিযানে আরও ১১ জন শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কমিশনার স্বপ্নীল পাল। এখন পর্যন্ত মোট ২২ জনের মধ্যে ১৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজন আহত অবস্থায় ডিব্রুগড়ের আসাম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং এখনও চারজন নিখোঁজ রয়েছেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত মন্ত্রী বিমল বরা এই ভয়াবহ ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, “উপর থেকে গাড়িটি দেখা যাচ্ছে না। সন্দেহ করা হচ্ছে, গাড়ির ভেতরে এখনও মৃতদেহ রয়েছে। এখনো গাড়িটি উদ্ধার করা যায়নি। গাড়ির কাছে গেলেই পাথর গড়িয়ে পড়ছে। তাই গ্যাস কাটার দিয়ে গাড়িটি কাটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারী দল।”
ছবি সৌজন্যে etv assam.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *