সংখ্যালঘুদের ভয় দেখিয়ে করিমগঞ্জে জয় বিজেপির : সুস্মিতা
বরাক তরঙ্গ, ৬ জুন : করিমগঞ্জে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নানাভাবে ভয় দেখিয়ে বিজেপিকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে, না হলে হাফিজ রশিদের মত একজন ব্যক্তি হারতে পারেন না, এমনটাই অভিমত রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেবের। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার একদিন পর শিলচরে বিভিন্ন বিষয় জনগণের কাছে ঠিকমতো তুলে রাখতে পারেননি। তিনি এও বলেন, বিজেপি বরাক উপত্যকার লোকের প্রতি লাগাতার বৈমাত্রিক ব্যবহার – করেছে তবে এর উত্তর দিতে পারেননি এই ভোটদাতারা এবং এর দায় বিরোধী দলগুলোরও।
সুস্মিতা বলেন, ‘করিমগঞ্জে সুরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় যারা থাকেন, তাদের বাড়িতে গিয়ে সরকারি আধিকারিকরা বলে এসেছেন, যদি বিজেপিকে ভোট না দেন তাহলে উচ্ছেদ হবে, গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে তাদের ঘরবাড়ি। এর প্রমাণ রয়েছে এবং ওই এলাকার কিছু লোক এর বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। এছাড়া ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেদের বলা হয়েছে, করিমগঞ্জে ভয় দেখিয়ে ভোটে তারা বিজেপিকে ভোট না দিলে অরুণোদয় সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে। গরিব মানুষের কাছে সবথেকে বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে নিজের পরিবারের লোকেদের জন্য খাবার জোগাড় করা। তারা জানেন ২০২৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে বিজেপি, ফলে যদি তারা ওই দলের প্রার্থীকে ভোট না দেন, তাহলে ছোটখাটো যেগুলো সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন সেটাও হাতছাড়া হবে। এসব হুমকির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে উঠে এসেছে এবং এছাড়া রয়েছে আরও প্রমাণ। অর্থাৎ করিমগঞ্জের বিজেপির প্রার্থী জয়ী হওয়ার পেছনে ছিল সরকারি চাপ এবং রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা ভয় দেখানো। সাধারণ মানুষ ভালোবেসে ভোট দেননি, ভয় পেয়ে দিয়েছেন।’ এবার লোকসভা নির্বাচনে অসমের চারটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস, এর মধ্যে অন্যতম ছিল শিলচর। এখানে প্রচারে এসেছিলেন দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে দলের প্রার্থী রাধেশ্যাম বিশ্বাস মাত্র ২০ হাজার ভোট পেয়েছেন। এই প্রসঙ্গে সুস্মিতা বলেন, ‘আমরা হেরেছি এটা ঠিক তবে লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। আগামীতে পঞ্চায়েত নির্বাচন রয়েছে এবং এরপর থাকবে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপির অপশাসনে অসমের এক শ্রেণির লোকেরা ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন, বারবার তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এনআরসি নিয়ে ভাওতা হয়েছে এবং একই ধরনের ভাওতা হচ্ছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে। সাধারণ মানুষ যে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, এর প্রতিফলন ভোট বাক্সে পড়েনি। বিজেপি বরাকে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বাইরে থেকে ছেলেমেয়েদেরকে এনে সুযোগ দিচ্ছে, কিন্তু স্থানীয়দের বঞ্চিত করা হচ্ছে। করিমগঞ্জ থেকে দুটো বিধানসভা আসন কমিয়ে দেওয়া হলো। এসব বিষয়ও তাদের ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেনি। এত কিছুর পরেও যখন বিজেপি ভোট পায়, তারা আর জনগণকে ভয় পাবে কেন? তারা তো বুঝেই গেছে বরাক উপত্যকার লোকেদের ধর্মের নামে আলাদা করে রাখা যায়। শুধু ভোটদাতাদের দোষারোপ করতে চাই না, বিরোধী দল হিসেবে আমরা হয়তো জনগণের কাছে বিষয়গুলো ঠিকভাবে তুলে ধরতে পারিনি।